প্রতিনিধি, খুলনা প্রকাশের সময় :৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ৩:৩৫ : অপরাহ্ণ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কুয়েটে ৭৬তম জরুরি সিন্ডিকেটের সভা হয়। সভায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয় বলে আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খখলা ও আচরণবিধির আলোকে অসদাচরণের আওতায় সিন্ডিকেট ৯ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান নাহিয়ান সেজান (রোল-১৩০৭০২৪), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিই) বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তাহামিদুল হক ইশরাক (রোল-১৫০১০৯০), এলই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাদমান সাকিব (রোল-১৫১৯০৩৩), একই বিভাগের শিক্ষার্থী আ. স. ম. রাগিব আহসান মুন্না (রোল-১৫১৯০৪৮), সিই বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান (রোল-১৬০১০২৯), (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (এমই) বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান (রোল-১৬০৫০৩৯), সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াজ খান নিলয় (রোল-১৬০৭০৭৫), এমই বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রিফাত (রোল-১৬০৫০৯৩) ও ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এমএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ নাইমুর রহমান অন্তু (রোল-১৬২৭০১০)।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর সাক্ষাতের পর ড. সেলিম হোসেনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওই সাক্ষাতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন এবং মানসিক নির্যাতন চালান।
অভিযোগে জানা যায়, সম্প্রতি লালন শাহ হলের ডিসেম্বরের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান নিজের লোককে ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিমকে জেরা করা শুরু করে।
পরবর্তী সময় তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ড. সেলিম হোসেনের কক্ষে অবস্থান করে। পরে তিনি ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাসায় যান।
সেখানে দুপুর ২টার দিকে বাসার টয়লেটে ড. সেলিম অচেতন হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে শিক্ষকরা বলেন, ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ সময় শিক্ষক ড. সেলিমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
অপর দাবিগুলো হলো-ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং শিক্ষকের পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছে।
এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যাপক সেলিম একজন অত্যন্ত সজ্জন, সৎ ও মেধাবী শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রবান্ধব হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
আরও পড়ুন: প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা, রোববার প্রতীকী লাশ মিছিল