নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৭ নভেম্বর, ২০২১ ৬:৩০ : অপরাহ্ণ
দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চেয়েছেন, ‘এটাই কি বেশি নয়? আর কতো চান?’
আজ বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জলবায়ু সম্মেলন এবং যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফর নিয়ে অবহিত করতে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। গণমাধ্যমকর্মীরা যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে।
সম্মেলনের শুরুতেই শেখ হাসিনা তার সফরের ওপর সাধারণ আলোচনা করেন।
তিনি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে তার সদ্যসমাপ্ত সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন।
এরপর রীতি অনুযায়ী শুরু হয় প্রশ্নত্তোর পর্ব, যা সব সময়েই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে।
এ সময় খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে তার পরিবারের আবেদন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে আপনাকে হত্যা করতে চায়, তাকে আপনি কি ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসবেন? আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এরপর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া বললো, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আত্মহত্যা করতে নিজেকে মেরেছিলাম। কোটালিপাড়ায় হামলার আগে তার (খালেদা জিয়া) বক্তব্য কী ছিল? তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীতো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। কারণ তখন তিনি ভেবেছিলেন আমি তো মরে যাবো। কিন্তু কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে। আমি এভাবেই বেঁচে আছি। সেই হত্যাকারীর কথা আমাকে কি করে আপনারা বলেন? কেউ এই প্রশ্ন করলে আমার মনে হয় অন্তত একটু লজ্জা হওয়া উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অমানুষ নই। অমানুষ নই বিধায় আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটি দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এত বড় অমানবিক যে, তাকেও আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কতো চান, এখন সে অসুস্থ, এই আমি বললাম না, রাখে আল্লাহ মারে কে; মারে আল্লাহ রাখে কে। সেটিই মনে করে বসে থাকুন। এখানে আমার কিছু করার নেই।’
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিএনপি ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন করে কীভাবে? জিয়া হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এসেছে। এরপর তার অন্য নির্বাচনগুলো কি নির্বাচন ছিল? ১৯৮১ সালে নির্বাচনে কি হয়েছিল, তা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলে? ইলেকশন কীভাবে করবে তারা? করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার, তা তো তাদের নাই। সরকার তৃণমূলে এমনভাবে উন্নয়ন করেছে, তাতে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।’
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রাণহানীর ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতা সব নির্বাচনেই হয়। কোন নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি বলেন। এটা শুধু এ দেশে নয় আমেরিকা, যুক্তরাজ্যসহ সব দেশে আছে। ২০০১ সালে কি হয়নি? নারীরা ধর্ষণ পর্যন্ত হয়েছে। কত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আপনি লন্ডনে দেখেন পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাটলেই মেরে ফেলে। আমার বোনের মেয়ে এতো বছরের এমপি হয়েও হামলার স্বীকার হলো আপনারা জানেন। আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে আমরা এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি চাই না।’
জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। তেল-বিদ্যুৎ-সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে প্রতি বছর ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। সরকার আর কতো ভর্তুকি দেবে। বাজেটের সব টাকা যদি ভর্তুকিতে দিয়ে দেই তাহলে সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্লাসগো, লন্ডন ও প্যারিসে সরকারি সফরকালে কপ২৬-এ বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১, ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলন, প্যারিস শান্তি ফোরাম, ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
১৪ নভেম্বর তিনি সফর শেষে দেশে ফিরেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ হেরেছে আওয়ামী লীগের কাছে: তারানা হালিম
আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে ভাসানীর মাজারে রেজা ও নুরের ওপর ছাত্রলীগের হামলা