নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৪ নভেম্বর, ২০২১ ১১:৪০ : অপরাহ্ণ
ছোট গল্পের সংজ্ঞার মতোই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। ম্যাচের প্রাণ ছোট, ব্যথা ছোট, দুঃখ কথাগুলোও ছোট ছোট। কিন্তু ছোট গল্পের মতো টি-২০ বিশ্বকাপে কিউইদের ব্যথা অল্পে সীমাবদ্ধ থাকলো না। বিশ্বকাপের টানা তিনটি ফাইনালে হেরেছে তারা। ব্ল্যাক ক্যাপসরা ডুবেছে দুঃখগাঁথায়। প্রথমবার টি-২০ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেরার মুকুট অনেকবার মাথায় উঠলেও, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা এতকাল অধরাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার। অবশেষে সপ্তম আসরে এসে শিরোপার দেখা পেল বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি দেশটি। নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের নতুন রাজা এখন অ্যারন ফিঞ্চের দল।
আজ রোববার দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
টস হেরে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের রেকর্ড ছোঁয়া ইনিংসে ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান করে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ১০ ওভারে তারা তুলেছিল মাত্র ৫৭ রান। পরের ১০ ওভারে ঝড় তুলে ১১৫! জবাব দিতে নেমে ১৮.৫ ওভারে ২ উইকেটে হারিয়ে অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে ছিল অস্ট্রেলিয়া। শুরুর দিকে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে (৫) হারালেও অসিদের একদমই চাপে পড়তে দেননি আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। মিচেল মার্শকে সঙ্গে করে জয়ের রাস্তাটা সহজ করে দেন তিনি। ১৩ ওভার পর্যন্ত উইকেটে টিকে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৩৮ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ৪ বাউন্ডারি ও ৩টি ছক্কা।
ওয়ার্নার ফিরলে বাকি কাজ সারেন মিচেল মার্শ। দুবাইয়ের মাঠে ঝড় তোলেন মার্শ। মাত্র ৩১ বলে তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। তাঁকে সঙ্গ দেওয়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও খেলেন হাতখুলে। ব্যাটসম্যানদের জ্বলে ওঠার দিনে জয় নিয়ে ভাবতেই হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। একেবারেই লড়াই ছাড়া ১৮.৫ ওভারে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া। ৫০ বলে ৭৭ রান করেন মিচেল মার্শ। ম্যাক্সওয়েল করেন ১৮ বলে ২৮ রান।
এর আগে আগে ব্যাট করতে নেমে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলে নিউজল্যান্ড। দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও ড্যারিল মিচেল ভালো শুরুর আভাস দেন। তবে ওপেনিং জুটি থিতু হওয়ার আগেই অস্ট্রেলিয়াকে স্বস্তি এনে দেন জশ হেইজেলউড।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে হেইজেলউডের অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা লেংথ বল ড্রাইভ করার চেষ্টা করেন মিচেল। কিন্তু তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। অসি কিপার ম্যাথু ওয়েড ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নিতে ভুল করলেন না। দলীয় ২৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড, ১১ রান করে আউট হন সেমিফাইনালের জয়ের নায়ক মিচেল।
মিচেল ফেরার পর জুটি বাধেন উইলিয়ামসন ও গাপটিল। তবে শুরুর ধাক্কার পর রানের গতি কমে যায় কিউইদের। পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে তাদের স্কোর বোর্ডে ওঠে ৩০ রান। এরপরও রান নিতে ধুঁকছিলেন দুই টপঅডার।
এর মধ্যে ১২তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন গাপটিল। জাম্পার ওই ওভারের প্রথম বলে ছক্কার চেষ্টা করেন গাপটিল। তবে টাইমিং ঠিক হয়নি। মিড উইকেট সীমানায় ক্যাচ উঠে যায়। সেখানে থাকা স্টয়নিস লুফে নিতে ভুল করলেন না। ওপেনিংয়ে নেমে ভালো শুরু আভাস দিয়েও সফল হলেন না গাপটিল। রান নিতে খুব ধুঁকেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ফরে গেছেন ৩৫ বলে ২৮ রান করে। দলীয় ৭৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
গাপটিল ফেরার পর রানের গতি অবশ্য বাড়ান অধিনায়ক উইলিয়ামসন। টানা দুই ছক্কায় ৩২ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর ১৪তম হাফসেঞ্চুরি। হাফসেঞ্চুরির পর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন কিউই অধিনায়ক। শুরুর দিকে মন্থর থাকা রানের চাকা দ্রুতই বাড়ান তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেন গ্লেন ফিলিপস। এই জুটি নিউজিল্যান্ড পায় ৬৮ রান। ১৮তম ওভারে ফিলিপসকে ফিরিয়ে এই শক্ত জুটি ভাঙেন হেইজেলউড। বল সীমানায় উড়াতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ফিলিপস। ১৭ বলে ১৮ রান করেন তিনি।
ফিলিপসের পর ভাঙে উইলিয়ামসনের প্রতিরোধও। দুর্দান্ত খেলতে থাকা উইলিয়ামসনকেও আউট করেন হেইজেলউড। রানের গতি বাড়াতে বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টায় ক্যাচ তুলে দেন কিউই তারকা। ১৪৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ১০ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় ৮৫ রান করে ফেরেন উইলিয়ামসন। টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।
উইলিয়ামসন ফেরার পর শেষ দিকে জিমি নিশাম ও টিম সেইফার্টদের ব্যাটে চড়ে শেষ পর্যন্ত ১৭২ রান করে নিউজিল্যান্ড। এদিন আর শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেননি নিশাম। ৭ বলে ১৩ রান করেন নিশাম। ৮ রান করেন সেইফার্ট।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বল হাতে মাত্র ১৬ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন জশ হেইজেলউড। ২৬ রান খরচায় একটি উইকেট নেন অ্যাডাম জাম্পা। সবচেয়ে বেশি খরুচে বোলিং করেছেন মিচেল স্টার্ক। ৪ ওভারে ৬০ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন এই পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭২/৪ ( গাপটিল ২৮, মিচেল ১১, উইলিয়ামসন ৮৫, ফিলিপস ১৮, জিমি নিশাম ১৩, সেইফার্ট ৮; হেইজেলউড ৪-০-১৬-৩, স্টার্ক ৪-০-৬০-০, জাম্পা ৪-০-২৬-১, কামিন্স ৪-০-২৭-০, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২৮-০, মার্শ ১-০-১১-০)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৮.৫ ওভারে ১৭৩/৪(ওয়ার্নার ৫৩, মার্শ ৭৭ , ফিঞ্চ ৫, ম্যাক্সওয়েল ২; বোল্ট ৪-০-১৮-২, টিম সাউদি ৩.৫-০-৪৩-০, মিলনে ৪-০-৩০-০, ইশ শোধি ৩-০-৪০-০, নিশাম ১-০-১৫-০)।
ফল: আট উইকেটে জয়ী অস্ট্রেলিয়া।