শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

আজ জেলহত্যা দিবস: ৮ পলাতকের সাজা কার্যকর হয়নি আজও



নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৩ নভেম্বর, ২০২১ ১০:০৫ : পূর্বাহ্ণ

আজ জেলহত্যা দিবস। পচাঁত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় এই দিনটি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী জাতীয় চার নেতাকে বন্দি করে রাখা হয় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেই বছরের ৩ নভেম্বর ইতিহাসের আরেকটি নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। কারাগারের সেলেই গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতক দলের গঠিত মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই চার নেতা। এরপর বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক সরকার তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। একপর্যায়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজকের দিনে চার নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘাতকদের পাঠানো হয় কারাগারে। হত্যা করার আগে সেখানে দায়িত্বরত কারারক্ষীরা বাধা দিলে মোশতাকের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে ঘাতকদের কাজে সহায়তা করার। এরপর ঘাতকরা কারাগারের মতো সুরক্ষিত স্থানে গিয়ে চার নেতাকে একত্র করে গুলি চালিয়ে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে বেরিয়ে যায়।

খুনিচক্র জেলহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিদেশে পালিয়ে যায়। জেলহত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর এই বিচারের প্রক্রিয়া ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান মামলার রায় দেন। রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন ও আবদুল মাজেদ ছিলেন জেলহত্যা মামলার আসামি।

২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলেও মারফত আলী ও হাশেম মৃধার খালাসের রায় হয়। এ ছাড়া সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন এই চারজনকে খালাস দেয় হাইকোর্ট।

জেলহত্যা মামলায় আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের আগেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় এ চারজনের মৃত্যুদণ্ড ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে কার্যকর করা হয়।

এদিকে জেলহত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় রয়েছেন বলে দীর্ঘদিন থেকে বলা হলেও তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আর খন্দকার আবদুর রশিদ ও শরিফুল হক ডালিম কোন দেশে অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সরাসরি গুলি করে খুন করা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলাতেও মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। নাম পাল্টে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর২৪ পরগনা জেলার একটি এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হন বলে খবর প্রকাশ হলেও পরে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি। দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থেকে চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশে আসা বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি ও জেলহত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদকে গত বছরের ৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ওই বছরের ৫ মে তার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়।

ইতিহাসের জঘন্যতম জেলহত্যা মামলার বিচারকাজ সর্বোচ্চ আদালতে ২০১৩ সালে নিষ্পত্তি হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আট পলাতককে গ্রেপ্তার করে সাজা কার্যকরের অপেক্ষা জাতির এখনো শেষ হয়নি।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর