নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৮ অক্টোবর, ২০২১ ১০:২০ : অপরাহ্ণ
সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন। তিনি বলেছেন, ‘১৯৮৮ সালে এরশাদ যে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিল, তা বাদ দিতে হবে। বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।।’
আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই দাবি জানান।
পূজামণ্ডপ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রতিবাদে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’ ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন বলেন, ‘যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকে, তবে অন্যরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। যদি বলেন, সবাই নাগরিক, তবে তো রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না। কোনো উন্নত রাষ্ট্রে তা নেই। কয়েকটি দেশে আছে, রাষ্ট্রধর্ম প্রত্যাহার করুন।’
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। প্রশ্ন করতে পারেন, কী করেছেন আপনারা? আমরা একটি আধুনিক বাংলাদেশ করতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাস পর বঙ্গবন্ধু এক অসাধারণ সংবিধান দিয়েছিলেন। হিন্দু বা মুসলমানের নয়, চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল সেই সংবিধান। বঙ্গবন্ধু সেদিন ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ ধর্মকে ব্যবহার করতে পারবে না।’
ড. অনুপম সেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছেন, কঠোর শাস্তি দেবো। কিন্তু তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন বলেন, এখনো তদন্ত চলছে? তদন্ত এতদিন ধরে চলবে কেন? অষ্টমীর দিন ঘটনা, ছয়-সাত দিন পেরিয়ে গেছে। তারপরও কেন তদন্ত প্রতিবেদন পাবো না-এর উত্তর চাই। অবিলম্বে তদন্তের খবর দিন, দোষীদের আইনের কাছে সোপর্দ করুন। তাহলে এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়-শব্দটা আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, তারা বুঝবে যে রাষ্ট্র তাদের পাশে আছে।’
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘আজ ছাত্রলীগকে মাঠে দেখি না, ঘরে বসে বসে বিবৃতি দেন। এত বড় সংগঠন আওয়ামী লীগের। কত অঙ্গ সংগঠন। তারা কেন নেই রাস্তায়?’
গণমাধ্যমের উদ্দেশে অনুপম সেন বলেন, ‘আপনারা লিখুন “বাংলাদেশ রুখিয়া দাঁড়াও”। বাংলাদেশ আর সাম্প্রদায়িক দেশ হবে না।’
সমাবেশে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘কিছুদিন পরপর একটি ঘটনা ঘটে, আর আমরা রাস্তায় দাঁড়াই। আজ সমাবেশের পর বাড়ি ফিরে গিয়ে আরেকটি ঘটনার জন্য অপেক্ষা করব— এমন ভাবলে ভুল হবে। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নামেনি।’
তিনি বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব। যখনই সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে, বুঝতে হবে, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় দায়িত্ব পালন করেনি।’ আজ কোনো রাজনৈতিক দল মাঠে নামেনি।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, কিন্তু এটা বঙ্গবন্ধুর দল নয়।’
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘সংবিধানে বাংলাদেশ আছে, পাকিস্তানও আছে। বঙ্গবন্ধু আছেন, জিন্নাহ সাহেবও আছে। দলে অনেক মোশতাক। মুজিব কোট গায়ে দিয়ে পাকিস্তানি প্রেতাত্মার সাথে মেলবন্ধন করে এ হামলাগুলো করা হয়েছে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার, নারীনেত্রী নুরজাহান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনূস, কবি কামরুল হাসান বাদল, জাসদ নেতা জসীম উদ্দিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, ওয়াকার্স পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, মহিলা পরিষদের লায়লা কবীর, সিপিবি নেতা সেহাবউদ্দিন সাইফু, সংগীতশিল্পী কল্পনা লালা ও শ্রেয়সী রায়, নাট্যজন আশীষ নন্দী, ম সাইফুল আলম চৌধুরী, সঞ্জীব বড়ুয়া, বাসদ নেতা মাহিন উদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলনের হাসান মারুফ রুমী এবং ন্যাপ নেতা মিটুল দাশগুপ্ত।