রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয় পার্টি

তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে বললেন জি এম কাদের



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৬ অক্টোবর, ২০২১ ৮:১০ : অপরাহ্ণ

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে কটূক্তি করে এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়ে গর্হিত কাজ করেছেন। এজন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে গাজীপুর মহানগর ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বলতে দেখা যায়, ‘ইসলাম আমাদের রাষ্ট্রীয় ধর্ম না। এটা বিশ্বাস করি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান লিখে গেছেন, সেই সংবিধানই থাকবে। এটার কোনো পরিবর্তন ওই এরশাদ, জিয়াউর রহমান, ওই সব মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর…এসব স্বৈরাচারের শাসনামল ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে আদালতের রায়ে। ওগুলো চলবে না। এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। বাহাত্তরের সংবিধানেই আমরা ফিরে যাবো।’

ওই ভিডিওর দিকে ইঙ্গিত করে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, ওই প্রতিমন্ত্রী সংবিধান সংরক্ষণের শপথ ভঙ্গ করেছেন। জননন্দিত ও সফল রাষ্ট্রপতি পল্লিবন্ধু এরশাদ এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। তাতেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সমুন্নত আছে। তাই কটূক্তি করে ওই প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেছেন। তাকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে, তা না হলে দেশের মানুষ একদিন এর বিচার করবে।

জি এম কাদের বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণার সঙ্গে সব ধর্মের অধিকার সাংবিধানিকভাবেই নিশ্চিত করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করার সাহস আর ক্ষমতা কারও নেই।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক চর্চা সম্ভব নয়। বর্তমান সংবিধান গণতান্ত্রিক চর্চার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, গণতন্ত্র চর্চা করতে হলে সংবিধানের অনেক ধারা সংশোধন করতে হবে। সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে সরকারদলীয় কোনো সংসদ সদস্য সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে পারে না। এতে এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। দেশের নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা ও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রায় ৯০ ভাগই সরকারপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে। তাই সরকারপ্রধান যা চাইবেন, তার বাইরে কিছুই সম্ভব নয়।

জি এম কাদের বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধান অনুযায়ী আইন করতে হবে। আইন না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে, ফুটবল খেলায় একটি দলের পক্ষ থেকে রেফারি নিয়োগ দেওয়ার মতো। আইন করে, উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে সংবিধান অনুযায়ী সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, নিবন্ধিত প্রায় ৪০টি দলের মধ্যে মাত্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি সক্রিয় আছে। বাকি দলগুলো সাইনবোর্ড বা নেতা সর্বস্ব রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেত্রী মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বের হয়ে রাজনীতির মাঠে নেই। আবার তাদের আরেক নেতা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। বাকি নেতাদের মধ্যে বিভেদ ও বিভাজনের অভাব নেই। আবার আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত।রাজনীতির মাঠেও আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে। কিন্তু গণমানুষের দাবি আদায়ে রাজনীতিতে সোচ্চার আছে শুধু জাতীয় পার্টি। ৩১ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থেকেও জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে টিকে আছে। নানা অপবাদ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে জাতীয় পার্টি এগিয়ে চলছে।

জি এম কাদের বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মকাণ্ডে রাজনীতি নিয়ে হতাশাগ্রস্ত। দেশের মানুষ আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চায়। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় পার্টি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়ে যাবে। তাই দলকে আরও শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএম নিয়াজ উদ্দিন বক্তব্য দেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর