রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৫:৪০ : অপরাহ্ণ
‘গোগী’ ভারতের রাজধানী দিল্লির অপরাধ জগতের পরিচিত নাম। পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। দিল্লির আলিপুরের মাত্র ৩০ বছরের এই তরুণকে সবাই চিনলো সে নিহত হওয়ার পর।
আজ শুক্রবার দিল্লির রোহিনী কোর্টের মধ্যেই বিরোধী গ্যাংয়ের গুলিতে নিহত হয়েছেন গোগী।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, সাধারণ পরিবারের ছেলে জিতেন্দ্র মান ওরফে গোগী। তার গ্যাংস্টার হয়ে উঠার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ কাহিনী।
খুন করেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করে গোগী। তখন সে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ছাত্র। সেই খুনের আগে গোগী অপরাধ জগতের লোক ছিলেন না, কেবলই সাধারণ পরিবারের ছাত্ররাজনীতি করা তরুণ ছিলেন। কলেজে ভোটের আগে বড়জোর দলবল পাকিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে সামান্য ধমক-চমক দিতেন। তখন ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের ‘দাদা’।
২০১০ সালে প্রিয় বন্ধু সুনীলের সঙ্গে হঠাৎ শত্রুতা গোগীকে গ্যাংস্টার বানিয়ে দেয়।
অভিযোগ উঠে, কলেজ ভোটের সময় দ্বন্দ্বের জেরে সুনীলের এক বন্ধুকে খুন করেন গোগী। তারপর থেকেই গোগী বনাম সুনীলের দ্বৈরথ দিল্লির কুখ্যাত ‘গ্যাংওয়ার’ বা দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে পরিণত হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর গ্রেপ্তার হন গোগী। ততদিনে তার এক সময়ের প্রিয় বন্ধু সুনীল ওরফে টিল্লুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভূত চেপেছে গোগী’র মাথায়।
শুক্রবার সেই টিল্লু গ্যাংয়ের লোকের হাতেই খুন হতে হলো গোগীকে-এমনটাই ধারণা পুলিশের।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সাল থেকে পুরোপুরি অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েন গোগী। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। চাঁদাবাজি, খুন, মারপিট, রাহাজানিতে তরুণ সন্ত্রাসী গোগী গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে দিল্লির মানুষ ভয়ে কাঁপতো এক সময়।
রাত-বিরাতে গোগীর দল রাস্তায় গাড়ি অপহরণ করতে বের হতো। কাছাকাছি কেউ থাকলে তাকে মেরে ফেলাই ছিলো গোগীর নীতি।
এর মধ্যে টিল্লু গ্যাংয়ের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও চলছিলো সমান তালে। ২০১৬ সালে গোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ততদিন গোগীর শক্তি বেড়েছে বহুগুণ।
জেল থেকেই নেটওয়ার্ক সামলাচ্ছিলেন তিনি। চরম শত্রু টিল্লুকে শেষ করার পরিকল্পনাও সাজাচ্ছিলেন। গোগীর দলে তখন নাম লিখিয়েছে অনেকেই। তাদের সাহায্যেই তিহার জেল থেকে আদালতে যাওয়ার পথে পালিয়ে যান গোগী। ফের শুরু হয় গোগীকে ধরতে পুলিশের অভিযান। তাকে ধরিয়ে দিতে ঘোষণা করা হয় পুরস্কারও।
পাঁচ বছরের চেষ্টায় গত বছর মার্চ মাসে ফেসবুকে আড়ি পেতে গোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে এরমধ্যেই তিনি হরিয়ানার নামী লোকগায়িকা হর্ষিতা দাহিয়াকে খুন করেছেন। তারই মতো আর এক গ্যাংস্টার বীরেন্দ্র মানকে খুন করেছে।
এমনকি ভিডিও বার্তায় পবন আঁচল ঠাকুর নামে বিরোধী গ্যাংস্টারদের দলের এক ঘনিষ্ঠকেও খুন করার কথা জানান তিনি। একের পর এক খুন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েই যাচ্ছিলো গোগী’র দল।
পুলিশ তার কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিলো না। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দিল্লির এক বিখ্যাত ক্যাফেতে বসে নিজের ছবি পোস্ট করেন তরুণ গোগী। সেই ছবি দেখেই তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। তখন গোগীর মাথার দাম দশ লক্ষ টাকা।
তারপর থেকে প্রায় দেড় বছর জেলে থেকেই গোগী অনেক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ উঠে। এর মধ্যেই শুক্রবার দিল্লির রোহিনী আদালতে তোলা হয় গোগীকে। সেখানে গোগীর দলের বাকি সদস্যরাও ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই সময় আইনজীবীর ছদ্মবেশে আদালতে প্রবেশ করে বিপক্ষ গ্যাংয়ের লোকজন। তারাই গোগীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশের ধারণা, এরা গোগীর সবচেয়ে বড় শত্রু টিল্লুর দলের লোক হতে পারে। কিন্তু এই ব্যাপারে পুলিশ পুরোপুরি নিশ্চিত না।
আরও পড়ুন: দিল্লির আদালতকক্ষে উকিলের পোশাক পরে সন্ত্রাসীদের গুলি, পাল্টা গুলি, নিহত ৩