রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা অর্থ-বাণিজ্য

মালিকরা কারাগারে, তহবিল নেই, ইভ্যালির এখন কী হবে



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৯:৪৩ : অপরাহ্ণ

চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর অফিসগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশের আলোচিত ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি।

আজ শনিবার ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে ইভ্যালি এক ঘোষণায় বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ শনিবার থেকে ইভ্যালি এমপ্লয়িরা নিজ নিজ বাসা থেকে অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

পাওনা টাকা বা পণ্যের দাবিতে ইভ্যালির অফিসগুলোতে দিয়ে গ্রাহকদের বিক্ষোভ করার পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি এই ঘোষণা দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কারাগারে, অফিস বন্ধ, ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত তহবিল নেই-প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইভ্যালির এখন কী হবে?

ইভ্যালির কার্যক্রম কী এখন চলছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহক, মার্চেন্ট ও অন্যান্য সংস্থার কাছে ইভ্যালির দেনা ৫৪৩ কোট টাকা। প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক রয়েছে দুই লাখের বেশি।

তবে প্রতিষ্ঠানটির হাতে রয়েছে একশো কোটি টাকারও কম সম্পদ।

অসংখ্য গ্রাহক ফেসবুক, ইভ্যালির পেজে ও টেলিফোনে জানাচ্ছেন, বহুদিন আগে তারা পণ্যের জন্য টাকা দিলেও এখনো পণ্য বা টাকা-কোনোটাই ফেরত পাননি।

নাজমুল হক নামের একজন গ্রাহক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘২৯ মে এসির জন্য ৩৩ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। বলেছিল, ৪৫ দিনের ভেতর সেটা দেবে। কিন্তু আর কোনোদিন সেটা পাবো বলে তো মনে হচ্ছে না। এই টানাটানির মধ্যে কতগুলো টাকার ক্ষতি হলো।’

ইভ্যালির নানা পোস্টের নিচে গ্রাহকরা মন্তব্য করছেন, তাদের অনেকের লাখ লাখ টাকা আটকে রয়েছে।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এমনকি ইভ্যালির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

যদিও প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়ে আসছিল যে, ছয় মাস সময়ের মধ্যে তারা সকল পেন্ডিং অর্ডার শূন্যে নামিয়ে আনবে।

মালিকরা কারাগারে, তহবিল নেই, ইভ্যালির এখন কী হবে

তবে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার হওয়ার পর অফিসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ই-কমার্সের মতো একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের গ্রাহক গ্রাহক, মার্চেন্ট, পণ্য প্যাকিং ও সরবরাহ ইত্যাদি কাজ করতে হয়, তাদের পক্ষে হোম অফিস থেকে কীভাবে এসব কর্মকাণ্ড চালানো হবে, তা পরিষ্কার নয়।

শুক্রবার একটি পোস্টে ইভ্যালি জানিয়েছে, তাদের প্রধান দুজন সিগনেটরি-সিইও এবং চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সেলারদের নিয়মিত বিল দিতে পারছে না। এই কারণে স্বাভাবিক ডেলিভারি কার্যক্রমও বিলম্বিত হচ্ছে।

এসব কারণে ১৭ সেপ্টেম্বরের সকল অর্ডার ‘রিকোয়েস্ট’ হিসেবে জমা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার মাত্র এ সকল অর্ডার কনফার্ম করা হবে।

অর্ডার নিশ্চিত করলে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী, ১০ শতাংশ মূল্য অগ্রিম জমা দিতে হতো।

ফলে এই ঘোষণার মাধ্যমে আসলে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম যে একপ্রকার থমকে গেছে, সেটাই পরিষ্কার হয়েছে।

ইভ্যালি নিয়ে যত সম্ভব পদক্ষেপ নিন : ই-ক্যাব
বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের কারণে যখন অসংখ্য মানুষ আর্থিকভাবে ঝুঁকির মুখোমুখি হন, তখন অতীতে পরিস্থিতি সামলাতে সেসব প্রতিষ্ঠানে আদালতের আদেশে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে সরকার।

প্রশাসক সরকারের পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে থাকে। এই সময় গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন প্রশাসকরা।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বিবিসি বাংলাকে বলছেন, যেহেতু এখানে অনেক মানুষের স্বার্থ জড়িত, সরকার চাইলে প্রতিষ্ঠানটি নিজেরা পরিচালনা করতে পারে অথবা কোনো একটা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে পারে।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখন আইনি পর্যায়ে রয়েছে। তবে সবার আগে এখন গ্রাহকদের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত সরকারের। তাই বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পান। হয়তো তাদের কিছু টাকা এখনো ব্যাংকিং চ্যানেলে আছে, বিভিন্ন সম্পদ আছে। সেগুলোর সমন্বয় করে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এসব পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

ইভ্যালি নিয়ে সরকার কী ভাবছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘সরকার তো চাইলেই প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে না। আদালত আদেশ দিলে তখন সরকার প্রশাসক নিয়োগ দেয়। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু মামলা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেখানে আদালত যদি আদেশ দেয়, তখন সরকার সেটি পালন করবে।’

তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ জানিয়ে রাখা উচিত। তাহলে যদি গ্রাহকদের টাকা ফেরতের কোনো প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, তখন তাদের সেটা সুবিধা দেবে।

বিবিসি বাংলা অবলম্বনে

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর