নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৮:১৫ : অপরাহ্ণ
মসজিদের ইমাম হওয়ার সুবাদে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিলো রাগীব আহসানের (৪১)। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালু করেন এমএলএম ব্যবসা।
ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে শরিয়াহভিত্তিক সুদমুক্ত বিনিয়োগের ধারণা প্রচার করে তিনি ১০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন।এরপরই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে হাতিয়ে নেন প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি এমএলএম কোম্পানির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন।এর ফলশ্রুতিতে র্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী ঢাকার শাহাবাগ থানার তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে সহোদর মো. আবুল বাশার খান (৩৭) সহ রাগীব আহসানকে (৪১) গ্রেপ্তার করে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ভাউচার বই ও মোবাইল ফোন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, রাগীব আহসান ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা শুরু করেন। পরে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে মুফতি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মসজিদে ইমামতি করেন।
র্যাবকে রাগীব আহসান আরও জানান, ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে তিনি ইমামতির পাশাপাশি ‘এহসান এস মাল্টিপারপাস’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করতেন।
মূলত এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে এমএলএম কোম্পানির আদ্যপান্ত রপ্ত করেন তিনি।
পরবর্তীতে নিজে ২০০৮ সালে ‘এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
র্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাগীব মূলত ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে অপব্যবহার করে এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করে।
তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তি, ইমাম শ্রেণি ও অন্যান্যদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন।
‘শরিয়ত সম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’ এর বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণা করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন তিনি। এছাড়াও তিনি ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের নামে ব্যবসায়িক প্রচার প্রচারণা করতেন।
লাখ টাকার বিনিয়োগে মাসিক মাত্রাতিরিক্ত টাকা প্রাপ্তির প্রলোভন দেখান। ২০০৮ সালে ১০ হাজার গ্রাহককে যুক্ত করতে সমর্থ হন। এখন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, রাগীবের তত্ত্বাবধানে ৩০০ মাঠ পর্যায়ের কর্মী ছিল। যাদের কোনো বেতন ছিল না। যদিও তাদের বিনিয়োগ আনার পরিমাণের ওপর ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা ছিল।
এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রুত গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হন রাগীব। কর্মী-গ্রাহক সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। কর্মী-গ্রাহকদের কাউকেই লভ্যাংশ পরিশোধ করেননি।
রাগীব আহসান র্যাবকে জানান, তিনি ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- (১) এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, (২) এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, (৩) এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, (৪) নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, (৫) জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, (৬) হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), (৭) আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, (৮) পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, (৯) এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, (১০) মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, (১১) মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, (১২) এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, (১৩) এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, (১৪) ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, (১৫) এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, (১৬) এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার, (১৭) এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।
র্যাব জানায়, রাগীব আহসান তার পরিবারের সদস্যদের নাম যুক্ত করে ব্যবসায়িক কাঠামো তৈরি করেন। তার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে শ্বশুর প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি, পিতা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা, ভগ্নিপতি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। এছাড়া রাগীব আহসানের ৩ ভাইয়ের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক, বাকি দুই ভাই প্রতিষ্ঠানের সদস্য।