রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ | ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৭ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

পাঞ্জশিরে তালেবানের হাতে মাসুদ বাহিনী পরাস্ত হলো যেভাবে


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ৮:০১ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জশির প্রদেশে তালেবান বাহিনীর সাথে লড়াই করার জন্য নর্দার্ন অ্যালায়েন্স নামে একটি জোট বেঁধেছিলেন বিদ্রোহী যোদ্ধারা। এই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন আহমদ মাসুদ। তার সঙ্গে ছিলেন আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ ও সাবেক প্রতিরক্ষমন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান।

আফগানিস্তানের সবচেয়ে ছোট প্রদেশ পাঞ্জশির উপত্যকায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের বসবাস। একে বলা হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের কেন্দ্র।

গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নিয়ে সবকিছুতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালেবান বাহিনী। কোনো বাধা ছাড়াই আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩টি দখল করে তারা। কেবল তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় পাঞ্জশিরে।

পাঞ্জশির প্রদেশটিকে তালেবানমুক্ত রাখার ঘোষণা দেয় নর্দার্ন অ্যালায়েন্স।

সোমবারের আগ পর্যন্ত পাঞ্জশির ছিল অজেয়। ১৯৮০ এর দশকে বিদেশি বাহিনী পাঞ্জশির দখল করতে পারেনি। ১৯৯০ এর দশকে তালেবান আফগানিস্তান শাসন করলেও পাঞ্জশির নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

এই অঞ্চলে সোভিয়েত বাহিনী ও তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন আহমদ মাসুদের বাবা শাহ আহমদ মাসুদ। তাকে পাঞ্জশিরের সিংহ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২০০১ সালে আল কায়েদার গুপ্ত হামলায় তিনি নিহত হন।

পাঞ্জশিরে আহমদ মাসুদের বিদ্রোহ ঘোষণার পর অঞ্চলটির ভাগ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিভিন্ন সমীকরণ কষা হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবান সহজে পাঞ্জশির দখল করতে পারবে না।

কিন্তু রোববার রাতে পাঞ্জশিরের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। সোমবার সকালে তালেবানের মুখপাত্র জাবিনুল্লাহ মুজাহিদ পাঞ্জশির বিজয়ের ঘোষণা দেন। প্রদেশটি দখলের পর তালেবান যোদ্ধারা গভর্নর ভবনের সামনে ছবিও তোলেন।

পাঞ্জশির দখলের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেন মাসুদ বাহিনী আরও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না এবং কোন কৌশল প্রয়োগ করে তালেবান পাঞ্জশির দখল করেছে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, তালেবান পাঞ্জশিরের টেলিফোন লাইন এবং ইন্টারনেট কেটে দেয়। এ কারণে বিদ্রোহী যোদ্ধারা যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেনি। একটি ফ্রন্ট থেকে আরেকটি ফ্রন্টের যোদ্ধারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন, তারা কোনো তথ্য পাচ্ছিলেন না।

পাঞ্জশিরে তালেবানের হাতে বিদ্রোহী বাহিনীর মুখপাত্র ও আহমদ মাসুদের বন্ধু ফাহিম দাস্তি নিহত হন। লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন আহমাদ শাহ মাসুদের ভাগ্নে জেনারেল আব্দুল ওয়াদুদ জারাও।

কিন্তু আহমদ মাসুদ এখন কোথায় আছেন এবং কী অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে পাঞ্জশির প্রদেশের নিয়ন্ত্রণকারী নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের কমান্ডার আহমেদ মাসুদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে দাবি করেছে তালেবান। তিনি আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে তুরস্কে চলে গেছেন বলে দাবি করেছেন তালেবানের নিউজ চ্যানেল আলেমারাহর সাংবাদিক তারিক গজনিওয়াল।

সোমবার ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাঞ্জশিরে ইন্টারনেট সেবা নেই। তাহলে আহমেদ মাসুদ অনলাইনে পোস্ট করছেন কীভাবে? তিনি তুরস্কে আছেন।

এর আগে পাঞ্জশির দখলের পর প্রতিরোধ বাহিনীর অন্যতম নেতা, আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে দাবি করেছিল তালেবান।

তালেবানের তরফ থেকে জানা গেছে, দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন সালেহ। তবে এ ব্যাপারে আমরুল্লাহ সালেহর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে তালেবান পাঞ্জশির বিজয় ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক অডিও বার্তায় আহমদ মাসুদ তার বাহিনীর লোকদের যুদ্ধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন। মাসুদ অভিযোগ করেন, তালেবান বিদেশি শক্তির সহায়তায় পাঞ্জশির দখল করেছে। বিদেশি শক্তি বলতে তিনি পাকিস্তানকে বুঝিয়েছেন।

১৯ মিনিটের ওই অডিও বার্তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা করে আহমেদ মাসুদ বলেন, তালেবানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বৈধতা দিচ্ছে। এ কারণে তালেবানের সামরিক ও রাজনৈতিক আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান পূর্বের তুলনায় এবার অনেক শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা উঠেপড়ে লেগেছে। এছাড়া তালেবানের দখলে ব্যাপক পরিমাণে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে। এসব কারণে পাঞ্জশির দখল তাদের জন্য খুব বেশি কঠিন ছিল না।

‘অপরাজিত’ পাঞ্জশির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তালেবান বুঝিয়ে দিলো, তারা ‘অপ্রতিরোধ্য’।

আল জাজিরা ও গার্ডিয়ান অবলম্বনে

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর