রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:০৫ : অপরাহ্ণ
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বতমালায় অবস্থিত পাঞ্জশিরে তালেবান বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় স্থানীয় বিদ্রোহী যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই চলছে। দুপক্ষই বলছে, তারা যুদ্ধে প্রতিপক্ষের বড় ক্ষতি করেছে। তবে এর স্বপক্ষে জোর প্রমাণ দিতে পারেনি কেউই।
আফগানিস্তানের পাঞ্জশির বাদে সব এলাকাই নিরঙ্কুশভাবে তালেবানের দখলে আছে।
বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিনদিনের তুমুল যুদ্ধের পর পাঞ্জশির উপত্যকা দখলে নেওয়ার দাবি করেছে তালেবান। যদিও পাঞ্জশিরের স্থানীয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংগঠন ন্যাশনাল রেজিসট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান (এনআরএফ) তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তালেবানের মুখপাত্র বিলাল করিমি টুইটে বলেন, ‘পাঞ্জশির প্রদেশের সাত জেলার মধ্যে চারটি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মুজাহিদরা (তালেবান যোদ্ধা) এখন (প্রদেশের) কেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছে।’
অপরদিকে ঞ্জশিরের স্থানীয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সংগঠন এনআরএফের ভাষ্য, তাদের যোদ্ধারা খাওয়াক গিরিপথে ‘শত শত সন্ত্রাসীকে’ ঘিরে ফেলেছে। দাশতে রেওয়াক এলাকায় সামরিক যান ও সরঞ্জাম রেখে পালিয়েছে তালেবান।
ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের নেতা আমরুল্লাহ সালেহ জানিয়েছেন, পাঞ্জশির এখনও তাদের দখলে। তবে পরিস্থিতি কঠিন বলেও জানান তিনি।
ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে বিদ্রোহীদের অপর নেতা আহমেদ মাসুদ জানান, তারা শক্ত হাতে উপত্যকাকে ধরে রেখেছেন।
বিদ্রোহীদের মুখপাত্র ফাহিম দাশতি বলেন, ‘তুমুল লড়াই চলছে তালেবানের সঙ্গে।’
পাঞ্জশির উপত্যকায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের বসবাস। একে বলা হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের কেন্দ্র।
এদিকে পাঞ্জশির এলাকায় তুমুল লড়াইয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের আগেই ক্ষমতার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়া তালেবান তাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কার শাসনে পাঞ্জশিরের দখল নিতে পারেনি।
তালেবান ও বিদ্রোহীদের এমন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি বলেন, ‘আমার সামরিক পর্যবেক্ষণ হলো সামগ্রিক পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তালেবান ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার পাশাপাশি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কি না, তা বলতে পারছি না।’
জার্মানির র্যামস্টেইন বিমানঘাঁটি থেকে ফক্স নিউজের সঙ্গে আলাপকালে মিলি বলেন, তালেবানের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে আগামী তিন বছরে আল কায়েদা পুনর্গঠন, আইএসের শক্তিবৃদ্ধি কিংবা অন্য অনেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান হবে।
এদিকে আফগানিস্তানে তালেবানের সরকার গঠন দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়েছে।
শুক্রবার মন্ত্রিসভা ঘোষণার কথা থাকলেও তালেবান জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে আসতে পারে নতুন সরকারের ঘোষণা।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন-নিউজ-এইটিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গোষ্ঠীটির আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের সমন্বয়কারী হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের দর-কষাকষির কারণে পিছিয়েছে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া।
সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদের আকস্মিক কাবুল সফরে পিছিয়ে পড়েছে তালেবানের নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা।
আইএসআই প্রধানের সঙ্গে শনিবার তালেবান নেতাদের কী আলোচনা হয়েছে বা ফয়েজ হামিদ তাদের কী পরামর্শ দিয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি।
এদিকে শনিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে অধিকারের দাবিতে বহু নারীর করা এক বিক্ষোভ মিছিল ছত্রভঙ্গ করেছে তালেবান।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা একটি সেতু থেকে হেঁটে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস এবং পিপার স্প্রে ছোঁড়া হয়। কাবুল এবং হেরাতে মহিলাদের বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের মধ্যে এটি সর্বশেষ।
নারীরা বাইরে কাজ করার অধিকার এবং সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়েছে এই বিক্ষোভে।
তালেবান বলেছে, নারীরা সরকারে যোগ দিতে পারবে, কিন্তু মন্ত্রীর পদে থাকতে পারবে না।