প্রতিনিধি, কক্সবাজার প্রকাশের সময় :২৫ আগস্ট, ২০২১ ১২:০১ : অপরাহ্ণ
বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার শুনানির সময় কাঠগড়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলেছিলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। গত সোমবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার প্রথম দিনের সাক্ষ্য নেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সেদিন আদালতে দায়িত্বপালনরত তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান জানান, আদালতে দায়িত্ব অবহেলার কারণে একজন এসআই ও দুজন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনা তদন্তে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপের কথা বলার একটা ছবি গতকাল মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সেদিন ওসি প্রদীপ মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রযুক্তির মাধ্যমে ওসি প্রদীপের ফোনালাপের তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
আদালত সূত্র জানায়, মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস তার ভাই মেজর (অব.) সিনহাকে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আদালতে। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন অভিযুক্ত ১৫ জন। তাদের মধ্যে প্রদীপ দুপুর ১২টার দিকে কাঠগড়ায় নিচু হয়ে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তার পরনে ছিল কালো পোলো শার্ট। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অদূরেই দাঁড়িয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক সদস্য। তিনি প্রদীপকে কথা বলতে বাধা দেননি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মোবাইল ফোনে একের পর এক কলে আনুমানিক ৩০-৪০ মিনিট কথা বলেছেন ওসি প্রদীপ।
আদালতের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, আদালত চলাকালীন সময়ে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদালতের কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপকে মোবাইল ফোনটি সরবরাহ করেছিলেন একজন কনস্টেবল। তবে এ ঘটনার সাথে আদালতে দায়িত্বরত এক এসআইসহ আরও দুই কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পুলিশ সুপার।
এদিকে আজ বুধবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিনহা হত্যা মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ফোনে কথা বলার ঘটনায় আসামি ওসি প্রদীপকে সতর্ক করেছেন আদালত।
সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় সোমবার। বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিন এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। মামলায় মোট ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে বাদীসহ ১ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন।
মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সাক্ষ্য দিয়ে প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাহিদুল ইসলাম সিফাত।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টের গাড়ি তল্লাশি কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যা ব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: ‘সিনহাকে গুলি করেন লিয়াকত, বুট দিয়ে গলা চেপে ধরেন প্রদীপ’
আরও পড়ুন: ‘লিয়াকত ফোনে বলেছে টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়’