রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১০ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

বিমানবন্দর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার প্রকল্প থেকে টাইগারপাসকে বাদ দেওয়ার দাবি


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২২ আগস্ট, ২০২১ ৯:২০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম নগরীর নান্দনিক সৌন্দর্যমন্ডিত টাইগারপাসকে বাদ দিয়ে বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামে ফ্লাইওভার প্রকল্পটির নকশা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে ‘চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন। টাইগারপাসের সৌন্দর্য বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি।

আজ রোববার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির চেয়ারম্যান সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী এ আহ্বান জানান।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থের ফ্লাইওভারটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটির ইতোমধ্যে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্পটির নকশা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

দেওয়ানহাট থেকে টাইগারপাস হয়ে লালখানবাজার পর্যন্ত এলাকায় সড়কের দু’পাশে দৃষ্টিনন্দন দুটি পাহাড় ঢেকে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। তাদের মতে, দেওয়ানহাট থেকে টাইগারপাস ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলে প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন থেকে বঞ্চিত হবে জনগণ। তাই তারা প্রকল্পের নকশা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। এ অবস্থায় ‘চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা।

টাইগারপাস মোড় থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত অংশটুকু প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম ঐতিহ্য রক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই আমাদের চট্টগ্রামে একটি টাইগারপাস আছে। এটি প্রকৃতির দান। এই প্রকৃতি প্রদত্ত অপরূপ নান্দনিক সৌন্দর্য ইট পাথরের কংক্রিটের নিচে ঢাকা পড়ে যাক, তা আমরা চাই না।’

টাইগারপাস

সিডিএর পরিকল্পনা অনুযায়ী টাইগারপাসের ফ্লাইওভারটি বিপজ্জনক উল্লেখ করে সাবেক এ সিটি মেয়র বলেন, ‘দেওয়ানহাট ধনিয়ালাপাড়া থেকে মনসুরাবাদের দিকে যে ওভারপাসটি গেছে, তার উপর দিয়ে আনতে হবে লালখান বাজারমুখী ফ্লাইওভারটি। এটি আনতে হবে ৮০ ফুট উচ্চতায়। ব্যস্ততম এই রুট দিয়ে বন্দর থেকে পণ্যবাহী যেসব যানবাহন চলাচল করে, সেসব গাড়ি এতো উঁচুতে উঠতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হবে।’

লালখানবাজারমুখী ফ্লাইওভারটি টাইগারপাসের পরিবর্তে দেওয়ানহাট ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে নামানোর বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘দেওয়ানহাট মোড় থেকে নৌ-বাহিনী সিনেমা হলের পাশ দিয়ে যে পুরানো রাস্তাটি আছে (দেওয়ানহাট ব্রিজ হওয়ার পর যেটি বন্ধ রাখা হয়েছে) তা আবার চালু করে সেখানে রেললাইনের ওপর ওভারপাস তৈরি করলে ফ্লাইওভার থেকে নেমে যানবাহন এই ওভারপাস হয়ে টাইগারপাস অতিক্রম করবে। তাহলে আমাদের ঐতিহ্যের টাইগারপাস যেমন রক্ষা পাবে তেমনি ১ হাজার কোটি টাকার মতো প্রকল্প ব্যয়ও সাশ্রয় হবে।’

সাবেক এ সিটি মেয়র বলেন, ‘টাইগারপাস রেলওয়ে ব্রিজটির যেহেতু মেয়াদ শেষ, তা ভেঙ্গে সেখানেও নতুন আরেকটি ওভারপাস তৈরি করা হলে সেটি দিয়ে আগ্রাবাদমুখী যানবাহন চলাচল করতে পারবে।’

সংগঠনের সদস্য সচিব সাংবাদিক জসীম চৌধুরী সবুজ সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সাথেও একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রাচীন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সকল ঐতিহ্য রক্ষায় পরিষদ সোচ্চার থাকবে। তবে এই মুহূর্তে টাইগারপাসকে আদিরূপে রক্ষা করাটা চট্টগ্রামবাসীর নৈতিক দায়িত্ব। আশা করছি সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান ও প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া।

সমন্বয়কারী এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুরের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন-যুগ্ম সদস্য সচিব স্থপতি আশরাফুল ইসলাম শোভন, সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ নজরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, সাংবাদিক আবসার মাহফুজ, এ কে জাহেদ চৌধুরী, হাসান মারুফ রুমী, সরোয়ার আমিন বাবু, নুরুজ্জামান, দীপ্তি দাশ, আবদুস সবুর খান, দিলরুবা খানম, আহমদ কবির প্রমুখ।

এদিকে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস পরিবেশবাদীদের এই আপত্তিকে ‘অবান্তর ও অদূরদর্শিতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, লালখানবাজার থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত অংশে ফ্লাইওভারটি চার লেন থেকে কমিয়ে দুই লাইনের করা হবে।

বুয়েট, চুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আগামী ৫০ বছর পর চট্টগ্রাম শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, তা চিন্তাভাবনা করে এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মুরাদপুর থেকে ২০ মিনিটে বিমানবন্দর পৌঁছানো যাবে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর