আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনী বা সাবেক আফগান সরকারের পক্ষে যারা কাজ করেছেন, তাদের খুঁজতে ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। জাতিসংঘের এক নথির বরাতে শুক্রবার (২০ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
আরএইচপিটিও-নরওয়েজিয়ান সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যানালাইসিস নামক প্রতিষ্ঠানের একটি গোপন দলিলে ‘আফগান সহায়তাকারীদেরকে’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার এই তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি জাতিসংঘকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
রাজধানী কাবুলসহ পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল তালেবান। বিদেশি সেনাসহ আগের সরকারের সঙ্গে কাজ করা আফগানদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গোষ্ঠীটি। তবে তালেবান তাদের এই প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পালন করছে না বলে জাতিসংঘের ওই নথিতে জানানো হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় ন্যাটো বাহিনীর হয়ে অথবা সাবেক আফগান সরকারের হয়ে কাজ করতেন, এমন ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করেছে তালেবান। তালিকায় নাম আছে বিপুলসংখ্যক মানুষের। তাদের সন্ধানে তল্লাশি তৎপরতা জোরদার করেছে তালেবান। গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা রাজধানী কাবুলের প্রতিটি বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এমনকি টার্গেটকৃত ব্যক্তির পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
রিপটোর প্রধান ক্রিস্টিয়ান নেলম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘আফগানিস্তানে এখন বহুসংখ্যক মানুষ তালেবানের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এবং তাদের হুমকির বিষয়টি পানির মতো পরিষ্কার।’
তিনি আরও বলছেন, ‘যাদের খোঁজ করা হচ্ছে, তারা নিজেরা আত্মসমর্পণ না করলে এই ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের তালেবান গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় নেবে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও শাস্তি দেয়া হবে বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে।’
ক্রিস্টিয়ান নেলম্যান সতর্ক করে বলেন, তালেবানের কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা মারাত্মক বিপদের মধ্যে রয়েছেন, এবং তাদের গণহারে মৃত্যুদণ্ড দোওয়া হতে পারে।
এদিকে, আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে তালেবানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। অন্যদিকে, আসাদাবাদে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
কাবুল থেকে ছেড়ে আসা মার্কিন বিমান থেকে পড়ে যারা মারা গেছেন, তাঁদের একজনের নাম জাকি আনোয়ার। ১৯ বছর বয়সী জাকি আফগানিস্তানের জাতীয় যুব ফুটবল দলের হয়ে খেলতেন।
বিদেশি শক্তিধর দেশগুলো তাদের নাগরিকদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ১৪ আগস্টের পর থেকে সাত হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে।
কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে পরিস্থিতি এখনও বিশৃঙ্খল। যারা দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন, তালেবান তাদের বাধা দিচ্ছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি শিশুকে বিমানবন্দরে একজন মার্কিন সেনার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, হাজার হাজার মার্কিন সাঁজোয়া যান, ৩০ থেকে ৪০টি উড়োজাহাজ এবং বিপুল সংখ্যক ছোট অস্ত্র এখন তালেবানের দখলে রয়েছে।
বিদেশিরা আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে তালেবান দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে এবং গত রোববার রাজধানী কাবুল দখল করে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে তালেবান গোষ্ঠীটি পিছু হটলেও ২০ বছর পর তারা পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে।
তালেবান এর আগে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া এবং কর্মস্থল থেকে নারীদের নিষিদ্ধ করাসহ নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে, আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের বক্তব্যে ছিল সমঝোতার সুর। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ‘ইসলামের আইনি কাঠামোর মধ্যে’ নারীদের অধিকার ও সম্মান দেওয়া হবে।
তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য করবে না। এর পরিবর্তে নারীদের হিজাব বা মাথা ঢাকতে হেডস্কার্ফ পরা বাধ্যতামূলক করা হবে। তালেবান আরও বলেছে যে, তারা নিজ দেশের ভেতরে বা বাইরে কোনো শত্রু চায় না।
এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর সাবেক সদস্য এবং যাঁরা বিদেশি শক্তির পক্ষে কাজ করেছেন, তাদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করা হবে বলেও জানায় তালেবান। যদিও আন্তর্জাতিক শক্তির পাশাপাশি অনেক আফগান তালেবানের এমন বক্তব্য নিয়ে সন্দিহান ছিল।