নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৭ আগস্ট, ২০২১ ২:৫০ : অপরাহ্ণ
কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি (প্রতিবেদনের ওপর অনাস্থা) আবেদন করেছেন বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া।
আজ (১৭ আগস্ট) মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির হয়ে তিনি এ নারাজি আবেদন করেন। একইসঙ্গে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব অন্য কেনো সংস্থাকে দেওয়ার আবেদন করা হয়।
আদালত মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান।
মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া আদালতকে বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে অবহিত করেছিলেন, ভুক্তভোগীকে হত্যা এবং ধর্ষণ সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করে তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। পরবর্তীতে আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে-সে সম্পর্কে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, আসামিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
গত ১৯ জুলাই মামলার তদন্তু কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোল্লা আবুল হাসান বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মুনিয়ার মৃত্যুর পেছনে সায়েম সোবহানের কোনো সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ পায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
মোসারাত জাহান মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।
গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর এ ঘটনায় মুনিয়ার বোন নুসরাত বাদী হয়ে গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুই বছর আগে এক বন্ধুর মাধ্যমে আনভীরের সাথে মুনিয়ার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। আনভীরের সাথে মুনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা।
এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত মাসের (মার্চ) ১ তারিখে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন।
গত ২৩ এপ্রিল ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় ইফতার পার্টিতে গিয়ে মুনিয়া ছবি তোলেন। ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করলে সেটি আনভীরের পরিবারের একজন দেখে ফেলেন এবং আনভীরকে জানান। বিষয়টি নিয়ে আনভীর মুনিয়াকে বকাঝকা করেন এবং হুমকি দেন। ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার মোবাইল নম্বর থেকে নুসরাতকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আনভীর আমাকে বিয়ে করবে না, সে শুধু আমাকে ভোগ করেছে। এছাড়া আমাকে সে ‘মনে রাখিস তোকে আমি ছাড়ব না’ বলে হুমকি দিয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, মুনিয়া ফোন করে নুসরাতকে চিৎকার করে বলেন, ‘যেকোনো সময় আমার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো।’
এই ফোনের পর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন নুসরাত। গুলশানের ফ্ল্যাটটির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পান তিনি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শোয়ার ঘরে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান।