রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৩ আগস্ট, ২০২১ ১০:২৫ : পূর্বাহ্ণ
তালবানের ছয় শীর্ষ নেতা ২০০১ সাল থেকে পশ্চিমা সমর্থিত আফগানিস্তান সরকারের সাথে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর থেকেই কাবুলের পশ্চিমঘেঁষা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে গোষ্ঠীটি।
‘৮০ এর দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার দখলদার বাহিনীকে পরাস্ত করে ‘মুজাহিদিনরা’। ঠান্ডা যুদ্ধের প্রতিপক্ষ সোভিয়েতকে আঘাত করতে এদের সবরকম সহায়তা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েতদের বিদায়ের পর এই মুজাহিদিনদের একাংশ নিয়ে গড়ে ওঠে তালেবান।
আফগানিস্তানে বিদেশি শাসনের অবসানের পর দেশটির শাসনক্ষমতা নিয়ে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শক্তিমত্তায় অন্যতম ছিল তালেবান। ১৯৯৬ সালের মধ্যে তারা আফগানিস্তানের সিংহভাগ দখল করে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করে। তালেবান জোরপূর্বক নিজস্ব ধরনের ইসলাম চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দমন-পীড়ন করছে-সেসময় এমন অভিযোগ আনে পশ্চিমা জোট ও তালেবান বিরোধী দলগুলো।
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর তালেবান উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র ও স্থানীয় বাহিনীর অভিযান শুরু হলে গা ঢাকা দেন তিনি। ২০১৩ সালে মারা যান মোল্লা ওমর। তার অবস্থান এতটাই গোপনীয় ছিল যে, দু’বছর পর তার ছেলে এই খবর নিশ্চিত করার আগে বাইরের দুনিয়ার কেউ জানতই না মারা গেছেন তালেবানের প্রধান।
আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার সাথে সাথেই আবার সামরিক উত্থান ঘটেছে তালেবানের। ইতোমধ্যেই তারা দেশটির বড় একটি অংশ দখলে নিয়েছে। ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১০টিই এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক তালেবানের কয়েকজন শীর্ষ নেতা সম্পর্কে।
হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা
তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা। দলটির রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় সকল বিষয়ে তার রায়ই চূড়ান্ত। ইসলামি আইন বিষয়ক পণ্ডিত এই ব্যক্তি অধীনস্থদের কাছে পরিচিত ‘বিশ্বাসীদের নেতা’ হিসেবে।
২০১৬ সালে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে মার্কিন ড্রোনের আঘাতে তালেবানের তৎকালীন প্রধান আখতার মনসুর মারা যাওয়ার পর নেতৃত্ব হাতে তুলে নেন আখুনজাদা।
রয়টার্সের সূত্রে জানা যায়, এর আগে ১৫ বছর ধরে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর কুচলাকের একটি মসজিদে শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচার করে আসছিলেন তিনি। এরপরই ২০১৬ সালে তালেবানকে নেতৃত্ব দিতে উধাও হন। ধারণা করা হয়, আখুনজাদার বয়স ৬০ এর আশেপাশে। তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে। দলের সামরিক বিভাগের প্রধান তিনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ইয়াকুব বর্তমানে আফগানিস্তানের ভেতরেই আছেন।
নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলের সময় তালেবানের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে তার নাম। কিন্তু বয়সে তরুণ এবং যুদ্ধের অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় তিনি নিজেই ২০১৬ সালে দলীয় প্রধানের পদে হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদার নাম সুপারিশ করেন। প্রয়াত নেতা মনসুরের উত্তরসূরি নির্বাচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন তালেবান নেতা এই তথ্য জানিয়েছেন।
ধারণা করা হয়, ইয়াকুব সদ্য ৩০ এর কোঠায় পা দিয়েছেন।
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি
প্রখ্যাত মুজাহিদিন নেতা জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে। তিনি ‘হাক্কানি নেটওয়ার্ক’ এর প্রধান। ঢিলেঢালাভাবে সংগঠিত এই নেটওয়ার্ক এর কাজ হচ্ছে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে তালেবানের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ তদারকি করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার সূত্রপাত এই হাক্কানিদের হাত ধরেই। দেশটিতে অনেক কুখ্যাত তালেবান হামলার জন্য এই নেটওয়ার্ককে দায়ী করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কাবুলের বিলাসবহুল হোটেলে আক্রমণ, সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইকে হত্যাচেষ্টা এবং ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলা। হাক্কানির বয়স সম্ভবত ৩০ থেকে ৪০ এর মাঝামাঝি। তার অবস্থান অজ্ঞাত।
মোল্লা আব্দুল ঘানি বারাদার
তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা। তালেবানের রাজনৈতিক বিষয়ের প্রধান বারাদার। সাম্প্রতিক সময়ে কাতারের রাজধানী দোহাতে যুদ্ধবিরতি এবং আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি রাজনৈতিক চুক্তির জন্য যে আলোচনা হয়, তাতে তালেবানের পক্ষে অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। কয়েক মাস যাবত চলমান এই আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মোল্লা ওমরের অন্যতম বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন এই বারাদার। ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। ২০১৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই
তালেবান সরকারের একজন উপমন্ত্রী ছিলেন। স্টানিকজাই প্রায় এক যুগ দোহায় থেকেছেন। ২০১৫ সালে দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
আফগানিস্তান সরকারের সাথে আলোচনাগুলোতে তালেবানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি স্টানিকজাই। দলটির প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
আবদুল হাকিম হাক্কানি
বিপক্ষের সাথে আলোচনায় তালেবানের নেতৃত্ব দেন। আগে তালেবানের বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন হাক্কানি। তালেবানের ভেতরে ধর্মীয় পণ্ডিতদের একটি দল তার অধীনে কাজ করে। বলা হয়, তালেবানের প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা যাদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম এই হাক্কানি।
সূত্র: আল জাজিরা