নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৩ আগস্ট, ২০২১ ৩:১৫ : অপরাহ্ণ
মাদক মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডলের আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পরীমনি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়।
পরীমনির বিরুদ্ধে নতুন করে কোনো রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি। তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। অপরদিকে পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিনের আবেদন করেন।
সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা আবেদনে উল্লেখ করেন, মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আসামি শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এমনকি পলাতক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, রিমান্ডে পরীমনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিনের আবেদনে উল্লেখ করেন. আসামি পরীমনি একজন প্রথম সারির চিত্রনায়িকা। ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’ ডিজিটাল তারকা হিসেবে বিশ্বের ১০০ জনের মধ্যে আসামির নাম রয়েছে। যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য গৌরবজনক।
আসামি জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্রের অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে তার যে চুক্তি হয়েছে তা ভঙ্গেরও সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি ‘প্রীতিলতা’ নামক সরকারি সিনেমার জন্য ফটোশুট হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের শিডিউল ভেঙে পড়েছে।
জামিনের আবেদনে আরও বলা হয়, পরীমনির বিরুদ্ধে ১৮.৫ লিটার মদ ও অন্যান্য মাদক রাখার অভিযোগ করা হয়েছে, যা আসামির দখল থেকে উদ্ধার করা হয় নাই।
গত ১০ আগস্ট পরীমনিকে মাদক মামলায় আরও দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিনের রিমান্ড আদেশ দেন আদালত। একই মামলায় তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুরও ২ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছিল।
একই সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় প্রযোজক ও পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজেরও ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ৫ আগস্ট রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও আশরাফুল ইসলাম দীপু এবং আরও দুজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা করে র্যাব। ওই দিন রাতে আদালতে তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে গত ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বনানীর ১৯/এ রোডের ১২ নম্বর বাসায় চিত্রনায়িকা পরীমনির ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব। পরীমনির বাসায় প্রায় ৩ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে ভয়ংকর নতুন মাদক এলএসডি ও আইস জব্দ করা হয়। এছাড়া বিপুল সংখ্যক বিদেশী মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।
রাত সোয়া ৮টার দিকে অভিযান শেষে র্যাবের সাদা রঙের কালো গ্লাসযুক্ত একটি হায়েস গাড়িতে করে পরীমনিকে নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব সদর দপ্তরে।
পরীমনির বাসায় ঢুকে বিস্মিত হন র্যাব সদস্যরা। তারা দেখেন, বাসার ভেতরে থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ব্রান্ডের মদের বোতল। পরীমনির বাসাটা যেন ছোটখাটো একটা মিনি বার।
অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাব কর্মকর্তারা জানান, পরীমনির বাসায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মদ পাওয়া যায়নি। তার বাসা থেকে রাশিয়ান ভদকা, জিন, টাকিলা, হুইস্কি ও বহু মূল্যবান রেড ওয়াইন ব্র্যান্ডের মদ জব্দ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়। এছাড়া তার বাসায় পাওয়া যায় বিদেশি সিগারেটও।
পরীমনির দেওয়া তথ্যে বুধবার রাত ৮টার দিকে র্যাবের একটি দল বনানীর জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে রাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে আটক করে। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, বিয়ার ও সিসার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।