শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

সিআরবি থেকে হাসপাতাল প্রকল্প সরাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় নাগরিক সমাজ


নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১০ আগস্ট, ২০২১ ৯:১৫ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রামের অন্যতম নান্দনিক ও ঐতিহাসিক স্থান সিআরবি থেকে বেসরকারী হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প অন্যত্র স্থানান্তর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

একুশে পদকজয়ী শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন বলেন, ‘সিআরবি রক্ষায় চট্টগ্রামের মানুষ তথা সারাদেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাই। হাসপাতাল হোক সেটা আমরা চাই, তবে সেটা কোনোভাবেই সিআরবিতে নয়। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিআরবি চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মিত হলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অপিনিয়নের (ইকো) উদ্যাগে পরিচালিত গবেষণায় সিআরবিতে ১৯৭ ধরণের উদ্ভিদ প্রজাতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিপন্ন প্রায় ৯টি প্রজাতির গাছও আছে এখানে। সিআরবির বৃক্ষরাজি সংরক্ষণ করা না হলে ভবিষ্যতে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এছাড়া এ এলাকায় ব্যাঙ, সাপ ও পাখির বিচরণ ক্ষেত্র। এখানে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প হবে দেশের সংবিধান ও পরিবেশ আইন বিরোধী একটি হঠকারী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, রেলওয়ে বলছে, এখানে হাসপাতাল হলে গাছ কাটা পড়বে না। অথচ হাসপাতাল নির্মাণের নির্ধারিত স্থানেই শতবর্ষী গাছসহ প্রায় ৩০০ গাছ রয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত স্থানটিতে রয়েছে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার কবর। যুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিতে এখানে বাণিজ্যিক হাসপাতাল হতে পারে না।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান চুড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ গেজেটভুক্ত প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউক প্রণিত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে সিআরবিকে কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সিআরবিকে সংরক্ষিত এরিয়া হিসেবে চিহ্নত করে তা সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে সিআরবিকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া যাবে না।

ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে এটি সংরক্ষণের জন্য রেলওয়ে, চউক, সিটি কর্পোরেশনসহ সেবাদানকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিআরবিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ সংবিধান পরিপন্থী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত বিষয়টি জানলে জনস্বার্থ বিরোধী এই প্রকল্প বাতিলে উদ্যোগি হবেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের কো চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনীতিবিদ মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, অধ্যাপক মো. হোসাইন কবির, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. ইদ্রিস আলী, অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, যুগ্ম সদস্য সচিব কামরুল হাসান বাদল, সাইফুল ইসলাম বাবু, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বিএফইউজে যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, পরিবেশবিদ শরীফ চৌহান, চবি অধ্যাপক ওমর ফারুক প্রমুখ

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর