নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৮ জুলাই, ২০২১ ১০:২৬ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামে ৬০ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের (কালো ছত্রাক) অস্তিত্ত মিলেছে।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা ফেরদৌসি বেগম নামে এই নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার পর তার শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করেছেন চিকিৎসকরা।
চার দিন ধরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বুধবার (২৮ জুলাই) চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির রাজনীতি সংবাদকে জানান, ষাটোর্ধ্ব ওই নারীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে আজকে তার ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করা হয়।
এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, এই রোগীর চিকিৎসা চলছে। আমরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেখবো। এরপর রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হবে কি না সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা যায়, গত ২৫ জুন থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন ফেরদৌসি বেগম। গত ৩ জুলাই তার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১৩ জুলাই তিনি করোনা নেগেটিভ হলেও তার নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে স্বজনরা তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আজ এই রোগীর ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করা হয়।
জানা গেছে, ওই নারীর স্বামী পাঁচদিন আগে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন।
ফেরদৌসি বেগমের ছেলে মো. বেলাল হোসাইন বলেন, পাঁচদিন আগে আমি আব্বাকে হারিয়েছি। এখন আমার মা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
ফেরদৌসি বেগমের মেয়ে তাহমিনা বেগম বলেন, ১৩ জুলাই মায়ের করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে। ১৫ জুলাই হঠাৎ তার দাঁতে ব্যথা শুরু হয়। আমরা মনে করেছিলাম, এটা ডেন্টাল প্রবলেম। একজন ডেন্টিস্টের কাছেও নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা রিপোর্ট দেখে তিনি সন্দেহ করেন, মা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত।
এরপর আমরা মাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। বায়োপসি রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হয়েছেন মা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত।
তাহমিনা বেগম জানান, চিকিৎসকরা আমার মাকে লিপোসোমাল অ্যামফোটেরিসিন বি ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের এই ওষুধ চট্টগ্রামে না পেয়ে আমরা ঢাকায় খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু কোথাও এই ওষুধ পাওয়া যায়নি। আমরা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার পরে তারাও জানিয়েছে, এই ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের কাছে মজুদ নেই।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আমাদের পরিবেশে সব সময়ই থাকে। এমনকি মানুষের শরীরেও থাকে। মিউকর নামের একধরনের ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। সাধারণত আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ায় এর বংশবিস্তার বেশি হয়।
এই ছত্রাকটি থাকে মাটি, গাছপালা, সার, পচন ধরা ফল ও সবজিতে। সাধারণত শ্বাসের সময়ে বা শরীরে কাটাছেঁড়া অংশের মাধ্যমে এটি মানবদেহে প্রবেশ করে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কমে গেলে এটা রোগ হিসেবে দেখা দেয়।
রোগটি ছোঁয়াচে নয়। তবে সংক্রমণ নাক, চোখ, কখনো কখনো মস্তিষ্কেও ছড়ায়। যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তাঁদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রবেশ করলে ফুসফুস ও সাইনাস আক্রান্ত হতে পারে। পরে শরীরের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।
করোনায় সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এ রোগীদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্তে জানা গেছে।
করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের অবস্থা গুরুতর হলে তাদের শরীরে স্টেরয়েড প্রয়োগ করা হয়। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের উপসর্গ
কিছু কিছু ফাঙ্গাস থেকে সংক্রমণের উপসর্গগুলোর সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীর লক্ষণগুলোর মিল রয়েছে। যেমন জ্বর, কাশি এবং নিঃশ্বাস নিতে না পারা।
ক্যানডিডা ফাঙ্গাসের বাড়তি উপসর্গের মধ্যে রয়েছে সাদা রঙের র্যাশ বা ক্ষত- যে কারণে একে অনেক সময় বলা হয় ‘সাদা ফাঙ্গাস’। নাক, মুখ, ফুসফুস, পাকস্থলি বা নখের গোড়ায় এই ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যেতে পারে, যে র্যাশ অনেক সময় সাদা ছানার মতো দেখায়।
এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শরীরে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অর্থাৎ তা রক্তে চলে গেলে প্রায়ই রক্ত চাপ কমে যাওয়া, জ্বর, পেটে ব্যথা এবং মূত্রনালীর প্রদাহের মত উপসর্গ দেখা যায়।