নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৪ জুলাই, ২০২১ ৮:৩৮ : অপরাহ্ণ
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক প্রাচীন ধর্মীয় সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ (প্রয়াত নূর হোসাইন কাসেমীর অংশের নেতারা )। ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিএনপির অনাস্থা, বিএনপি মহাসচিবের শরীয়া আইনে বিশ্বাসী না হওয়ার বক্তব্য ও কারাবন্দী আলেমদের বিষয়ে রহস্যজনক নীরবতার কারণে ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন জমিয়ত নেতারা।
বুধবার (১৪ জুলাই) পুরানা পল্টনে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। এসময় দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দীন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, বিশেষ এক পরিস্থিতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে নিবাচনী ঐক্য গড়ে তোলে। এ ধারাবহিকতায় ঐক্যবদ্ধভাবে কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
কিন্তু অত্যন্ত দুখের সঙ্গে বলতে হয় যে, জোটের শরিক দলের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, সম্প্রতি শরিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে মতামত না নিয়ে তিনটি আসনের উপনির্বাচন এককভাবে বর্জনের ঘোষণা করা, জোটের কোন কার্যক্রম না থাকা, বিএনপি মহাসচিবের শরীয়া আইনে বিশ্বাসী না হওয়ার বক্তব্য দেয়া, দেশব্যাপী আলেম উলামাদের জেলজুলুমের প্রতিবাদে কার্যকর কোন ভূমিকা না রাখা এবং জোটের শীর্ষ নেতা জমিয়ত মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর বিএনপির পক্ষ থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন না করা ও জানাজায় অংশগ্রহণ না করায় জমিয়তের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, জমিয়ত মনে করে, ২০ দলীয় জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করাই জমিয়তের জন্য কল্যাণকর। আজ থেকে জমিয়ত জোটের কোন কার্যক্রমে সক্রিয় থাকবে না।
জমিয়তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় জমিয়তের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন-জুনায়েদ আল হাবিব, শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি, মনির হোসেন কাসেমী, খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী ও মোহাম্মদ উল্লাহ জামী। তাদের মুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে জোট ছাড়ার বিষয়টি কাজে দেবে, এমনটি মনে করছেন নেতারা। এ বিষয়ে এতদিন পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মত থাকলেও এখন জোট ছাড়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ২০ দলের সঙ্গ ত্যাগ করার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসার পর সংবাদ সম্মেলন করে জোট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এখন বুঝে নেন, কেন তারা জোট থেকে বেরিয়ে গেছে।’
প্রসঙ্গত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দুই ভাগে বিভক্ত। উভয় অংশ বিএনপি জোটের শরিক। একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত নূর হোসাইন কাসেমী। অপর অংশের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত মুফতি ওয়াক্কাস। করোনা আক্রান্ত হয়ে নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর এই অংশের এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা জিয়াউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব)। নূর হোসাইন কাসেমী অংশের নেতারা ঘোষণা দিলেও মুফতি ওয়াক্কাসের অনুসারীরা এখনও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছেন।
২০০১ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে দলটির দুজন নেতা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।