শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জে কারখানায় আগুন: ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার, স্বজনদের আহাজারি



প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ প্রকাশের সময় :৯ জুলাই, ২০২১ ২:৪১ : অপরাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে কারখানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।

আজ শুক্রবার (৯ জুলাই) বেলা সোয়া দুইটার দিকে কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (উন্নয়ন) নূর হোসেন।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতদের বেশিরভাগই শিশু। এর আগে এই অগ্নিকাণ্ডে গতকাল তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে আজ সকাল ১১টার দিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ হয়।এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুড লিমিটেডের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে সংরক্ষণাগার থেকে ৩টি শটগান লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রূপগঞ্জের ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় জুস কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভবনের নিচ তলায় কার্টনের গুদাম থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় গোটা কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পড়েন শ্রমিক স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৩৪)। ঘটনাস্থলেই তারা দুজন মারা যান। এরপর মোরসালিন (২৮) নামের একজন শ্রমিক প্রাণ বাঁচাতে ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেন। মোরসালিনকে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, ২০ দিন আগেও ফ্যাক্টরটির চারতলায় আগুন লাগে। তবে, সে সময় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কারখানাটিতে প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করলেও আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে ১০০০ থেকে ১২০০ শ্রমিক কাজ করতেন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আগুন কিছুটা কমে আসে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনটির নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রবেশ করে কিছু পোড়া লাশ খুঁজে পেয়েছেন। কারখানাটির ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিকসহ দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক আব্দুল আল আরিফিন রাজনীতি সংবাদকে জানান, ভোরের দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল, সকালে আবারও ভবনের ৪-৫ তলায় আগুন বেড়ে যায়।

শ্রমিকদের দাবি, আগুন লাগার পরই আটকে দেয়া হয় কারখানার কলাপসিবল গেট। এমন কি একটি ফ্লোরে আগুন জ্বলতে থাকলেও কাজে বাধ্য করা হয় অন্য ফ্লোরের শ্রমিকদের। এ অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন নি ঘটনাস্থলে উপস্থিত কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউ। এছাড়া, আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ, সেটিও জানাতে পারেননি তারা।

নাজমা বেগমর ছোট ছেলে রিপন খান ইয়াসিন কাজ করতেন সেজান জুসের কারখানার চার তলায়। পড়াশোনার ফাঁকে পরিবারের জন্য কিছু বাড়তি উপার্জন করতে কারখানায় কাজ নেন চার মাস আগে। গতকাল আগুন লাগার পর থেকে খোঁজ মিলছে না রিপনের। তাই মা নাজমা বেগমের আকুতি থামছে না।

আগুনের ঘটনার পর খোঁজ মিলছে না কল্পা রানী বর্মনের। তার ভাই কল্পার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। যাকে পাচ্ছেন তাকেই উন্মুখ হয়ে জিজ্ঞেস করছেন, ছবির এই মেয়েটিকে কেউ দেখেছেন কিনা?

নিখোঁজ মোহাম্মদ আলীর ছবি নিয়ে ঘটনাস্থলে আছেন তার ছোট ভাই টিপু সুলতান। আগুন লাগার পরে স্বজনদের মোবাইলে ফোন করে মাফ চান মোহাম্মদ আলী। মাত্র দুই মাস আগে বাবা হয়েছেন তিনি। ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন টিপু সুলতান।

শ্রমিকরা বলছেন, আগুন লাগার ঘটনা জানতে পেরে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। তারপরও কাজ করতে বাধ্য করা হয় তাদের। তালা দেয়া হয় গেইটে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর