নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৯ জুলাই, ২০২১ ৬:২৫ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে হঠাৎ কর্মসূচি পালন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রামের মেডিক্যাল কলেজের পূর্ব গেইটে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার বুথ উদ্বোধন করেন। তিনি নগর স্বেচ্ছাসেববক লীগের নেতা-কর্মী না হয়েও সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠান করার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংগঠনটির নেতারা।
বিদ্যুৎ বড়ুয়া চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার সন্তান বিদ্যুৎ বড়ুয়া আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার ছোট ভাই।
বিদ্যুৎ বড়ুয়ার এই কর্মসূচিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নির্দেশনায় এ বুথ চালু করা হয়।
কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি তো বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে নগর স্বেচ্ছাসেববক লীগের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশ দিইনি। এখন মহানগরের কমিটি না থাকলেও যে কেউ চাইলে মহানগরের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করতে পারবে না। একমাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই ব্যানারে কর্মসূচি পালন করতে পারবে। এছাড়া আর কারও সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠান করার এখতিয়ার নেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মী না হয়ে যদি কেউ সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর স্বেচ্ছাসেববক লীগের ব্যানারে বিদ্যুৎ বড়ুয়ার এই কর্মসূচিতে মহানগরের বিলুপ্ত কমিটির কোনো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন না। বিলুপ্ত কমিটির নেতারা এই কর্মসূচি সম্পর্কেও অবগত ছিলেন না। বরং তারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে কর্মসূচি পালনের খবর শুনে বিস্মিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুন নগরীর লালখান বাজার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বড়ুয়া হঠাৎ নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে সরব হওয়া নিয়ে গতকাল থেকে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা বলছেন, মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি করার এখতিয়ার কারও নেই।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচ এম জিয়াউদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি (বিদ্যুৎ বড়ুয়া) কীভাবে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে এই কর্মসূচি করলেন? এটা আমার বোধগম্য না।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরুল কবির রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি (বিদ্যুৎ বড়ুয়া) কর্মী তো দূরের কথা, কোনো দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগও করেননি। তিনি মহানগরের নেতা-কর্মী না হয়ে সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করতে পারেন না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির একজন নেতা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সংগঠনের নেতা-কর্মী না হয়েও ব্যানার ব্যবহার করে কর্মসূচি করার পেছনে তার (বিদ্যুৎ বড়ুয়া) কোনো ব্যবসায়িক মনোভাব রয়েছে।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির আরেকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, তিনি হয়তো (বিদ্যুৎ বড়ুয়া) একটা টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সামনে নগর আওয়ামী লীগের কমিটি হবে, হয়তো সেটার জন্য তিনি ক্ষেত্র তৈরি করছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বড়ুয়া রাজনীতি সংবাদের কাছে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেন।
তিনি প্রথমে বলেন, ‘মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের তো এখন কোনো কমিটি নেই। কাজেই নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে কর্মসূচি যে কেউ করতেই পারে। আর এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির জন্য বায়োডাটা দেওয়া অন্তত ৫০ জন পদ প্রত্যাশী ছিলেন। তাছাড়া আমি তো আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। সামনে পাহাড়তলীতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে আমার আরও একটা প্রোগ্রাম আছে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে সেটার সার্টিফিকেট কী? কর্মীদের তো কোনো সার্টিফিকেট নেই। কর্মী তো যে কেউ হতে পারে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘এখানে আমার কী ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য রয়েছে? আমার এই কর্মসূচি নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তারা তো এমন ভালো কাজ করতে পারছেন না। তাই সমালোচনার করছেন। তাদেরও ভালো কাজে এগিয়ে আসা উচিত।’
একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ কর্মসূচির আয়োজন করিনি। আমাকে উদ্বোধক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাই গিয়েছি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরাই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।’
জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে স্বাচিপ ও বিএমএ নেতা ডা. রিজোয়ান রেহান, সিভাসুর কর্মকর্তা আবু আরিফ, ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইঞ্জিনিয়ার এসএম মোজাহেদুল ইসলাম রানা, মো. জাহিদুল ইসলাম জুয়েল, ডা. উপল চাকমা, রাকিবুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু, ডা. হাবিবুর রহমান, চমেক ছাত্রলীগের ডা. আফিফ আনজুম রিফাত, প্রীতম কুমার সাহা, মাহাদী বিন হাসিম, ওয়াহেদ মুরাদ শাহীন, অনির্বাণ দে, কায়াস মাহমুদ আহসান উল্লাহ, পল্লব বিশ্বাস, সাদ মোহাম্মদ গালিব, ডা. ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্ঝর বড়ুয়া জয় ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শিমুল বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।