নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৫ জুলাই, ২০২১ ৭:৫০ : অপরাহ্ণ
চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা মামলা ও মাদক মামলায় ১৬ দিন জেল কেটে কারামুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ। গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) থেকে তিনি মুক্তি পান। আজ রোববার (৫ জুলাই) গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে ৯ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির ইউ মাহমুদ দাবি করেন, সেই রাতে পরীমনি মদ্যপ অবস্থায় ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে আবারও মদের অর্ডার দেন। সঙ্গীদের নিয়ে দুই বোতল মদ খাওয়ার পর একটি দামি ব্র্যান্ডের মদের অর্ডার দেন। ওয়েটাররা দিতে না চাইলে নিজ হাতে পরীমনি সেটি বারের সেলফ থেকে নিয়ে আসেন। এতে বাধা দিলে পরীমনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন।
তিনি বলেন, আমি ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যকরী পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে ক্লাবের ডিসিপ্লিন, মেনটেইন্যান্স, কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ও এন্টারটেইনমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত। সেদিন রাত আনুমানিক ১২টায় বোট ক্লাবেরই একজন সদস্যের সঙ্গে তিনজন অতিথি ক্লাবের বারে প্রবেশ করেন।
নাসির ইউ মাহমুদ বলেন, আমি তখন অন্য টেবিলে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমি দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম তারা (পরীমনিসহ ওই চারজন) মদ্যপ অবস্থায়ই ক্লাবে প্রবেশ করেন। এ অবস্থায় তারা আমাদের পাশের একটি টেবিলে বসেন এবং ওয়েটারদের ড্রিংকসের বোতল দিতে বলেন। ওয়েটাররা এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে সার্ভ করেন, তা অতিদ্রুত তারা শেষ করে ফেলেন এবং আরও এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে আনান এবং সেই বোতলের অর্ধেকেরও বেশি শেষ করে ফেলেন।
এ সময় নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীমনি (যার নাম আমি পরে জেনেছি) একটি দামি তিন লিটারের ‘ব্লু লেবেল’র বোতল বারের সেলফ থেকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে টেবিলে আসেন এবং তা সঙ্গে নিতে চান। এ সময় ওয়েটাররা তা নিতে বাধা দিলে পরীমনি ক্ষিপ্ত হন এবং ওয়েটারদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। একপর্যায়ে টেবিলে রাখা প্লেট-গ্লাস অনবরত ছুড়ে ভাঙতে থাকেন।
তিনি বলেন, যেহেতু আমি ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি ইনচার্জ, সেহেতু বিষয়টির ব্যাপারে ওয়েটাররা আমার সাহায্য চায়। তখন আমি পরীমনিদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলি এই ড্রিংকসের বোতল বিক্রি যোগ্য নয়। সেই সময় পরীমনি আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন এবং টেবিলে রাখা প্লেট, গ্লাস ছুড়ে মারতে থাকেন। আমি তাকে বারবার অনুরোধ করি, যাতে তিনি এসব থেকে নিভৃত হন।
কিন্তু পরীমনি তা কর্ণপাত না করে উল্টো আমাকে লক্ষ্য করে গ্লাস ছুড়তে থাকেন এবং একসময় একটি গ্লাস আমার ঘাড়ে লাগে। পরে আরও গ্লাস ছুড়তে চেষ্টা করলে আমি তাকে শান্ত হতে বলি। সে মুহূর্তে তার সঙ্গে আসা জিমি (পরে নাম জেনেছি) আমার ওপর চড়াও হন। এ অবস্থায় ক্লাবের বাইরে দায়িত্বরত সিকিউরিটি স্টাফদের ডাকি। কিছুক্ষণ পরেই ক্লাবের সিকিউরিটিরা উপস্থিত হন এবং বলি তাদের ক্লাব থেকে বের করে দিতে। এ কথা বলে আমি ক্লাব ত্যাগ করি।
নাসির ইউ মাহমুদ বলেন, ঘটনার চার-পাঁচ দিন পর পরীমনি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন এবং এর কিছুক্ষণ পর তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আমাকে নিয়ে তার মিথ্যাচারে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি।
ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী জানিয়ে তিনি বিবৃতিতে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মহামান্য আদালতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমি ন্যায়বিচার পাবো।
প্রসঙ্গত গত ১৩ জুন সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে পরীমনি অভিযোগ করেন, তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন পরীমনি। ১৩ জুন রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, গত ৯ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে তিনি আশুলিয়ার একটি ক্লাবে যান। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজনের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তার মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
পরদিন এ ঘটনায় সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পরীমনি।
মামলার পরপরই ওই দিন বিকেলে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাসির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এসময় অমির বাসা থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করে ডিবি পুলিশ।
পরে ডিবির গুলশান জোনের উপ-পরিদর্শক মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় গত ১৫ জুন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নাসির ও অমির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ওই মামলায় রিমান্ড শেষে পরীমনির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাদের। এ মামলায়ও গত ২৩ জুন তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডেপোয় পুলিশ।
গত ২৯ জুন পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাদের ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন সাভার থানার মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।