নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৯ জুন, ২০২১ ১১:০১ : অপরাহ্ণ
গত ১১ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় আকিজ বিড়ির গোডাউনে ডাকাতি হয়েছিল। ডাকাতরা একজনকে খুন করে ৪৯ কার্টন বিড়ি, দুটি মোবাইল সেট এবং নগদ ১ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার আড়াই মাস পর গত ২৭ মে নগরীর ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট পোস্তারপাড় এলাকায় একটি গোডাউন থেকে ৯৪ কার্টন সিগারেট ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার চার দিনের মাথায় নূর নবী নামে এক ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানা। এ ঘটনায় গত ৩১ মে এক সংবাদ সম্মেলনে ডবলমুরিং থানা পুলিশ দাবি করে, মাত্র ৪ দিনে ক্লু বের করে ডাকাতদের গ্রেপ্তার করা হয়।
অথচ একই সূত্রে গাঁথা দুটি ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পতেঙ্গা থানা! একই ডাকাত চক্র পতেঙ্গা এলাকায় আকিজ বিড়ির গোডাউন ও দেওয়ানহাট পোস্তারপাড় এলাকায় গোডাউনে ডাকাতি করেছিল।
জানা গেছে, টানা একমাস ধরে তদন্ত করে কুমিল্লা, ফেনী ও মিরসরাইয়ে অভিযান চালিয়ে এই ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল পতেঙ্গা থানা পুলিশের ৮ সদস্যের একটি টিম। দেওয়ানহাট এলাকায় গোডাউনে ডাকাতির ঘটনার একমাস আগে পতেঙ্গা থানা ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এই ডাকাতির ঘটনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেন ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান।
পতেঙ্গা থানা সূত্রে জানা গেছে, নূর নবী পতেঙ্গায় আকিজ বিড়ির গোডাউনেও ডাকাতির মিশনে অংশ নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানা পুলিশ মোহাম্মদ আলী নামে এক সিগারেট ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর ডাকাত সর্দার নূর নবীর নাম বেরিয়ে আসে। তাকে গ্রেপ্তার করতে সীতাকুন্ডে অভিযান চালিয়েছিলো পতেঙ্গা থানা পুলিশের একটি টিম। কিন্তু অভিযানের আগে সে পালিয়ে যায়।
পতেঙ্গা থানার সূত্রটি জানায়, দেওয়ানহাট এলাকায় গোডাউনে ডাকাতির ঘটনার পর ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন পতেঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমানের সহায়তা নেন। পতেঙ্গা থানা থেকে নূর নবীর বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়। শুধু তাই নয়, পতেঙ্গা থানার কয়েকজন অফিসারও নূর নবীকে গ্রেপ্তারের অভিযানে ডবলমুরিং থানাকে সহায়তা করেন।
পতেঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘অপরাধ দমনে সিএমপির একটি থানা অন্য আরেকটি থানাকে সহযোগিতা তো করবেই। ডাকাত সর্দার নূর নবীকে গ্রেপ্তার করতে ডবলমুরিং থানাকে সব রকমের ক্লু দিয়ে আমরা সহযোগিতা করেছি। আমাদের অফিসাররাও তাদের সাথে অভিযানে সম্পৃক্ত ছিল। যে কারণে অভিযান ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডবলমুরিং থানা চার দিনের মধ্যে ঘটনার ক্লু বের করার কথা কেন বলেছে সেটা তাদের বিষয়।’
জানা গেছে, ডাকাত সর্দার নূর নবীকে গ্রেপ্তারের অভিযানে সহযোগিতা করা পতেঙ্গা থানার অফিসারদের একজন হলেন এসআই আফতাব উদ্দিন মজুমদার।
তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘দেওয়ানহাটে সিগারেটের গোডাউনে ডাকাতির ঘটনায় নূর নবীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে আমি প্রথমে ক্লু উদঘাটন করি। আমি আসলে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না…।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি কি পারছি না পারছি সেটা তো মালামাল উদ্ধার করে দেখিয়েছি। আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি, এরপর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি হয়েছে। এখন কে কি বললো, সেটা আমার দেখার বিষয় নই।’
পতেঙ্গা থানার একজন অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চার দিনের মধ্যে ঘটনার ক্লু উদঘাটন করে নূর নবীকে গ্রেপ্তার করার কথা শুনে আমরা অবাক হয়েছি। অথচ নূর নবীর ক্লু বের করেছি আমরা। এই ডাকাত চক্রের ক্লু বের করতে আমরা ৮ জন অফিসার টানা একমাস ধরে রাত-দিন কাজ করেছি। তিনি ফেমাস অফিসার, আমরা আর কী বলবো।’
পতেঙ্গায় ডাকাতির অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া রুবেল গ্রেপ্তার
পতেঙ্গা এলাকায় আকিজ বিড়ির গোডাউনে ডাকাতির ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া মো. রুবেলকে (৩২) সাড়ে ৩ মাস পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৮ জুন) পতেঙ্গা থানা পুলিশের একটি টিম নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। এরআগে ডাকাত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরা হলেন-মো. মোস্তফা (৩৫), রাসেল (২৫), শাহদাত (২৮), সেলিম (২৮) এবং নুর উদ্দিন (৩২)।
পতেঙ্গা থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে পতেঙ্গা থানার জিএম গেইট আদর্শ কলোনিতে আকিজ গ্রুপের গোডাউনে ডাকাতরা এসেছিলেন একটি পিকআপে করে। ডাকাতি করে তারা পতেঙ্গা কাটগড় হয়ে লিংক রোড দিয়ে চলে যান।
এ ঘটনার তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পতেঙ্গা থানার সেকেন্ড অফিসার মনিরুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ডাকাতদের পিকআপটি পতেঙ্গা কাটগড় হয়ে লিংক রোডে উঠার সময় সেখানে থাকা একটি সিসি ক্যামেরায় আমরা সেই দৃশ্য দেখতে পায়। ক্যামেরায় পিকআপটির নাম দেখতে পাই লামিয়া পরিবহন। পরে আমরা তদন্ত করে জানতে পারি, এই লামিয়া হলো দেওয়ানহাটে সিগারেটের গোডাউনে ডাকাতির অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নূর নবীর মেয়ে। তখনই আমরা নূর নবীকে শনাক্ত করি।’