নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৬ জুন, ২০২১ ৪:৪৫ : অপরাহ্ণ
লকডাউন ঘোষণার পর থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে হাজারো মানুষ। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষের অধিকাংশই শ্রমজীবী। স্বাভাবিক সময়ের মতো গণপরিবহন না চলায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। দুশ্চিন্তা ও পথের কষ্ট সঙ্গে নিয়েই বিভিন্ন উপায়ে গ্রামে ছুটছেন তারা।
শনিবার (২৬ জুন) এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর সীমানাবর্তী যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও সাইনবোর্ড এলাকায়।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার দেখা গেছে, অনেকেই আসবাবপত্র নিয়ে একেবারে রাজধানী ছাড়ছেন।
রাজধানীর মতিঝিলে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আবু তাহের। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের যেতে গাবতলী এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, একদিকে দীর্ঘদিন ধরে সন্তানদের স্কুল-কলেজ বন্ধ। অন্যদিকে লকডাউনে অফিস-আদালত বন্ধ। শুধু শুধু কি হবে বাসা ভাড়া দিয়ে, তাই পরিবার নিয়ে গ্রামে যাওয়া।
সকাল থেকেই গাবতলী এলাকার চিত্র গত কয়েক দিনের তুলনায় বদলে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন পথ ধরে লোকজন এসে নামছে গাবতলীতে। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেটে সিএনজি, অটোগাড়ী, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন উপায়ে মানুষ রওনা দিচ্ছে গ্রামের বাড়ির দিকে। আর এসব পরিবহনে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছুটে চলছে এসব যানবাহন। এতে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
২২ জুন রাজধানীর আশপাশের চার জেলাসহ দেশের সাতটি জেলায় লকডাউন জারি করে সরকার। ওইদিন থেকে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার পরিবহন। কিন্তু সরকারের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই বাড়ির উদ্দেশে ছুটছে মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর গাবতলীতে বাড়িফেরা মানুষের ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। গণপরিবহন না থাকলেও হেঁটে রাজধানী ছাড়ছে সবাই। আবার অনেকেই একইভাবে ঢাকায় প্রবেশ করছে।
গাবতলী থেকে পায়ে হেঁটে আমিনবাজার গিয়ে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকা ছাড়তে মরিয়া মানুষ। ঢাকামুখী অনেক গাড়ি আমিন বাজার চেক পোস্টে পুলিশ ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এসব গাড়িগুলো সেখানে অবস্থান করায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে রাস্তার উভয় দিকেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর এলাকায়। লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ এই মহা-সড়কের একাধিক স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে ছিল। ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনকে পুলিশ ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ঢাকাগামী ও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এতেও লোকজনের যাতায়াত ঠেকানো যাচ্ছে না।
এদিকে সকাল থেকেই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও ফেরিঘাটে মানুষের ঢল নেমেছে। শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে ১৭টি ফেরি চলাচল করেও মানুষের ভিড় সামাল দিতে পারছে না। একটি ফেরি শিমুলিয়া ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন হুড়মুড় করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরছে। লোকজনের চাপের কারণে জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ফেরিতে উঠতে পারছে না।
সকাল থেকে এই নৌরুটের ফেরিগুলোতে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চল উভয়মুখী অসংখ্য যাত্রীকে পার হতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ভিড়ও বাড়তে থাকে।