বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ | ১২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১৯ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা ইসলামী দল

মুফতি ফয়জুল্লার সরকারবিরোধী একটি বক্তব্য ও স্ববিরোধী অবস্থান (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২২ জুন, ২০২১ ১:৪০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লার সরকারবিরোধী একটি বক্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে এই আক্রমণাত্মক বক্তব্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিষোদগার ও কটাক্ষ করেন। তার এই বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা চলছে।

৯ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে মুফতি ফয়জুল্লার এই বক্তব্যের স্থান ও সুনির্দিষ্ট সময় জানা যায়নি। তবে ফুটেজে তার বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিলের আগে কোনো এক মাহফিলে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। কারণ বক্তব্যে তিনি ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল লালবাগে হেফাজতে ইসলামের পূর্বঘোষিত সমাবেশে যোগ দিতে মুসল্লিদের অনুরোধ করেন।

এই বক্তব্যে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘কয়েকজন স্বঘোষিত নাস্তিককে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে এই মুসলমানের দেশে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের মতো করে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। হাসিনা সরকার দেশকে তুরস্ক বানাইতে চায়, স্পেন বানাইতে চায়। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, একজন ঈমানদার মুসলমান বেঁচে থাকতে এই শিক্ষানীতি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।’

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস হলে হেফাজতে ইসলাম এর কয়েকটি ধারাকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক দাবি করে তখন তীব্র বিরোধিতা শুরু করে।

মুফতি ফয়জুল্লাহ তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে আক্রমণাত্মক ভাষায় বলেন, ‘কুরআনী শিক্ষার সাথে এতো জ্বালা কেন? প্রভুদের খুশি করবার জন্য? মোসাদকে (ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা) খুশি করবার জন্য?, সিআইএ’কে (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা), র’ কে (ভারতের শীর্ষ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা) খুশি করবার জন্য? যদি তা হয়ে থাকে, তাদেরকে বলুন, আপনার জন্য সেই দেশে একটি ঘর নির্মাণ করতে, বাংলাদেশে আপনার স্থান হবে না। বাংলাদেশের মানুষ কোনো দালালকে ক্ষমতার মসনদে দেখতে চায় না।’

মুফতি ফয়জুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘হাসিনা যা বলে তা করে না, যা করে তা বলে না।’ এ কথা বলার পর তিনি মুসল্লিদের কাছে জানতে চান, ‘এটাকে কী বলে?’ উত্তরে মুসল্লিরা উচ্চস্বরে জবাব দেন-‘মুনাফেক’। এ সময় উত্তেজিত কণ্ঠে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘এরকম কোনো সরকার, কোনো প্রধানমন্ত্রী মুসলমানের দেশে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আমরা এমন সরকারকে গদিতে দেখতে চাই না। এমন সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে হেঁচড়ে নামাইবার জন্য কারা কারা বুকের তাজা রক্ত দিতে প্রস্তুত আছেন?’

মুফতি ফয়জুল্লার আক্রমণাত্মক এই বক্তব্য শুনে তখন মাহফিলে সমবেত মুসল্লিরা স্লোগানে স্লোগানে গর্জে ওঠেন। তখন মঞ্চে মুফতি ফয়জুল্লার পাশে এক ব্যক্তি স্লোগান দিতে থাকেন-‘আগুন জ্বালাও এক সাথে, হাসিনার গদিতে।’

বক্তব্যে মুফতি ফয়জুল্লাহ হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘আমাদের দেশের তৌহিদী জনতার মুসলমানের দাবি যদি সরকার না মানে, তাহলে ২৭ এপ্রিল, আল্লামা শাহ আহমদ শফির আহ্বানে আমরা ঢাকায় অবস্থান নিবো। ঢাকার নির্দিষ্ট একটি জায়গাকে কুরআনী স্কয়ার ঘোষণা করে যতদিন মুসলমানের দাবি আদায় না হবে, ততোদিন পর্যন্ত পুরো ঢাকা অবরোধ থাকবে।’

এ বিষয়ে জানতে সোমবার (২১ জুন) রাতে ফোনে মুফতি ফয়জুল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তখন কী বক্তব্য দিয়েছি তা এ মুহূর্তে আমার মনে নেই। ভিডিও ফুটেজটি দেখে আমি আপনার সাথে কথা বলবো।’

এখন সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত মুফতি ফয়জুল্লার এই বক্তব্যে তার স্ববিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘মুফতি ফয়জুল্লাহ তার বক্তব্যে যে সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে ফেলার হুংকার দিয়েছিলেন, তিনি সেই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে কেন করুণা ভিক্ষা চাইলেন? তাহলে কি তার ঈমানের জোর কমে গেছে নাকি তিনি তখন যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা প্রতারণা ছিল?’

হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরীস রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘তিনি (মুফতি ফয়জুল্লাহ) তার নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করে জাতির কাছে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে মন্তব্য করেছেন, তার (ফয়জুল্লাহ) অবস্থানও কিন্তু একই রকম।’

আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যুর পর হেফাজত থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তার সঙ্গে বিতাড়িত হয়েছেন প্রয়াত আল্লামা শফির ছেলে হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী ও হেফাজতের সাবেক সহকারী যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী। আল্লামা শফির হাতে হেফাজতের নেতৃত্ব থাকাকালে তারা সবাই একজোট ছিলেন। হেফাজত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তারা এখন পৃথক একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। মুফতি আমিনীর ছেলে হাসনাত আমিনীসহ অনেকেই আছেন তাদের সঙ্গে।

২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের যেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে, মুফতি ফয়জুল্লাহ, আনাস মাদানী ও মাঈনুদ্দিন রুহীও সেসব মামলার অন্যতম আসামি। কিন্তু তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

হেফাজতের মধ্যে প্রচার আছে, সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে মুফতি ফয়জুল্লাহ ও তার সঙ্গীরা সরকারের আনুকূল্য পাচ্ছেন এবং আপাতত তারা স্বস্তির মধ্যে আছেন। মুফতি ফয়জুল্লার নেতৃত্বে হেফাজতের কয়েকজন সাবেক নেতা গত ২ মে রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

জানা গেছে, প্রয়াত আল্লামা শফির ছেলে আনাস মাদানীকে সামনে রেখে মুফতি ফয়জুল্লাহ হেফাজতের মূল ধারার বিপরীতে পাল্টা কমিটি গঠনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

দেখুন মুফতি ফয়জুল্লার সেই বক্তব্যের ভিডিও-

আরও পড়ুন:

‘বাবুনগরীর লোককে ধরবেন, শফি সাহেবের লোককে ধরবেন না, তা হবে না’

আরও পড়ুন:

https://rajnitisangbad.com/2021/06/17/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%a8%e0%a6%97%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%b2%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%b6/

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর