নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৭ জুন, ২০২১ ৮:৪০ : অপরাহ্ণ
হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে ইউটার্ন (পল্টি খাওয়া) নিয়েছেন চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। আল্লামা শফির মৃত্যুর পর নদভী হেফাজতের নতুন আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে সখ্যতা গড়ার চেষ্টা করলেও আজ তিনি তার বিরুদ্ধে সংসদে অভিযোগ তুলেছেন। বাবুনগরীর কারণে হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফির জানাজায় অংশ নিতে পারেননি বলে সংসদে অভিযোগ তুলেছেন নদভী।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই অভিযোগ তুলেন।
সাংসদ আবু রেজা নদভী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির জানাজায় লাখো মানুষ সমবেত হয়েছিল। একটি জানাজায় সবাই যেতে পারবে, কারো জন্য বাধা নেই। কিন্তু আমি আল্লামা শফির একজন ঘনিষ্ট হয়েও আমাকে তার জানাজায় যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।’
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ এবং আল কায়েদা ও আইএসের আদর্শে গড়ে ওঠা মানহাজি গ্রুপের সদস্যরা তাকে বাধা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হল, ‘আপনি জানাযায় যেতে পারবেন না। যেতে হলে আমিরুল মুমিনিনের অনুমতি লাগবে।’’
তখন আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমিরুল মুমিনিন কে?
তারা বললো, ‘আমিরুল মুমিনিন হলেন, জুনায়েদ বাবুনগরী।’
এ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়ে আবু রেজা নদভী বলেন, ‘বারবার অনুমতি চেয়েছি, কিন্তু তিনি (বাবুনগরী) অনুমতি না দেওয়ায় পরে আমি জানাজা না পড়ে চলে এসেছি।’
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আল্লামা শাহ আহমদ শফির জানাযায় সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী অংশ নেওয়ার জন্য গেলে হাটহাজারী বাস স্টেশন চত্বর থেকে তাকে কয়েকজন যুবক ফিরিয়ে দেন।
হেফাজতের একটি সূত্র জানায়, আল্লামা শফির সাথে সাংসদ নদভীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু আল্লামা শফি মারা যাওয়ার পর সাংসদ নদভী তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। তিনি হেফাজতের নতুন আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
জানা যায়, আল্লামা শফির মৃত্যুর এক মাস পর ২০ অক্টোবর সাতকানিয়ার মুফতি গোলাম কাদের নামে এক আলেমের জানাযায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। জানাযায় অংশ নেন স্থানীয় সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীও। জানাযা শেষে তিনি জুনায়েদ বাবুনগরীকে তার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
এ সময় বাবুনগরীর সঙ্গে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস। তিনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘হুজুর (বাবুনগরী) নদভী সাহেবের বাসায় যেতে চাননি। তিনি (নদভী) অনেকটা জোর করে হুজুরকে তার বাসায় নিয়ে যান। অনেক রকমের খাবার দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করেছিলেন।’
গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর প্রবতর্ক মোড়ে বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে দেখতে গিয়েছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। এ সময় মন্ত্রীর সাথে সেখানে ছুটে যান সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীও।
হেফাজতে ইসলামের অপর একটি সূত্র জানায়, আল্লামা শফির মৃত্যুর পর সাংসদ নদভী জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে তলে তলে সম্পর্ক গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু সরকার যখন জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন, তখন সাংসদ নদভীও তার অবস্থান বদলে ফেলেন।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল এক নেতা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, আল্লামা শফির জানাযায় যেতে বাধা দেওয়ার কথা সাংসদ নদভী এতো দিন কেন বলেননি? কেন তিনি জুনায়েদ বাবুনগরীকে তার বাসায় জোর করে নিয়ে গেলেন?
আারও পড়ুন:
আরও পড়ুন:
‘বাবুনগরীর লোককে ধরবেন, শফি সাহেবের লোককে ধরবেন না, তা হবে না’