নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৫ জুন, ২০২১ ৫:৪০ : অপরাহ্ণ
দেশে হঠাৎ করেই করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এক মাস আগে সংক্রমণ হার কমে ৭ শতাংশে নেমে এসেছিল। এখন সেটি আবার বেড়ে ১৫ শতাংশ ছুঁইছুঁই। আজ মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ হাজার ২৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩১৯ জন। যা গত ৫৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। রোগী শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার প্রায় ১৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনার রোগী শনাক্ত হন। এর পর সংক্রমণ বেড়ে জুন-জুলাইয়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। ওই সময়ে সংক্রমণের হার ছিল ২৩-২৪ শতাংশ। এর পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে। হঠাৎ চলতি বছরের মার্চ থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সংক্রমণ হার ২৩-২৪ শতাংশে পৌঁছায়।
উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতিতে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর সংক্রমণ কমতে শুরু করে। মে মাসে সংক্রমণ হার ৭-৮ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু রোজার ঈদের পর সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে। গত ১৫ মে সংক্রমণ হার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, এক মাসের ব্যবধানে আজ শনাক্তের হার বেড়ে ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এসব এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কোনো কোনোটির লকডাউন বাড়ানো হয়েছে দ্বিতীয় মেয়াদে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত ৮ মে ডেল্টা ধরন শনাক্ত হয়। প্রথমে ভারত থেকে ফেরা তিন বাংলাদেশির দেহে এটি শনাক্ত হলেও এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ব্যাপক বৃদ্ধির জন্য ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই দায়ী। প্রথম পর্যায়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও আশপাশের জেলাগুলোয় সংক্রমণ বেশি হলেও এখন খুলনা ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোয় সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। সীমান্তের কোথাও কোথাও দৈনিক শনাক্তের হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। এই সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বেশি বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দিকে আরো আগে থেকেই নজর রাখা উচিত ছিল। বিশেষ করে যখন পাশের দেশে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বেড়ে যায় তখনই যদি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপকভাবে টিকা দেওয়া যেত, তবে হয়তো এখন ওই সব এলাকায় এত সংক্রমণ না-ও হতে পারত।
গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ বেশি ছিল খুলনা বিভাগে। সেখানকার ১০টি জেলায় ১ হাজার ৫৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬১৪ জন, অর্থাৎ শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। বিভাগ পর্যায়ে শনাক্তের এই হার সর্বোচ্চ। রাজশাহী বিভাগে ৩ হাজার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী পাওয়া গেছে ৬৪৮ জন, শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ৫৭৯টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ১৬৮ জন, শনাক্তের হার ২৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে ১১ হাজার ১০০ নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার জন, শনাক্তের হার ৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ২ হাজার ৪৫৩টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩৫ জন, শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৬৩ জন, শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ৩৪১টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪০ জন, রোগী শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ৫৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন ৮৪ জন, শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে এখন পর্যন্ত ৬১ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৪টি নমুনা পরীক্ষা করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮ লাখ ২৯ হাজার ৯৭২ জন। মোট নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আরও ৫৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে করোনায় মোট মারা গেলেন ১৩ হাজার ১৭২ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৩৯ জন এবং নারী ১৫ জন।