নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৮ মে, ২০২১ ৩:৪৯ : অপরাহ্ণ
করোনার বিশেষ সময়ে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য বিশেষ বাজেট দরকার বলে মনে করছে বিএনপি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাততে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবিলার বাজেট চায় দলটি।
বাজেট ঘোষণার পাঁচ দিন আগে আজ শুক্রবার (২৮ মে) সকালে ‘বাজেট ভাবনা অর্থবছর ২০২১-২০২২’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৪ দফা বাজেট ভাবনা তুলে ধরেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বলছেন করোনাকালে এবারের বাজেট গতানুগতিক বাজেট হওয়া উচিত নয়। করতে হবে বিশেষ সময়ের বিশেষ বাজেট। এর মূখ্য উদ্দেশ্য হবে করোনা প্রভাব মোকাবিলার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও দুর্ভোগ উপশম করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতি এক মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। কতদিন এই দুর্যোগ চলবে তা অনিশ্চিত। জীবন ও জীবিকার টানাটানিতে জনজীবন ও অর্থনীতি দুটোই মহাসংকটে পড়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। করোনা সংকট মোকাবিলায় করোনাকালে অর্থনীতিকে সুন্দর রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা এবং এর সামাজিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দায় বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে বহন করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে দরকার হবে সহায়ক নীতি। অনেক মনে করেন, করোনার ভয়াবহতা না কমলে গতানুগতিক বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ৬ মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মনে রাখতে হবে জীবিকার চেয়ে জীবন আগে। তাই এবারের বাজেট হতে হবে মূলত জীবন বাঁচানোর বাজেট। এ বাজেট হওয়া উচিৎ ঝুঁকি মোকাবিলা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বাজেট। এ বাজেট হতে হবে জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার বাজেট।’
মেগা প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের বিরোধিতা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মেগা প্রকল্পের মেগা দুর্নীতির সব কাহিনী আপনারা সবাই জানেন। দেখা গেছে যে, সরকার সাধারণ মানুষের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চেয়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণেই বেশি আগ্রহী।’
কালো টাকা সাদা করার সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসছে বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যতোদিন অপ্রদর্শিত আয় থাকবে, ততো দিন এই সুযোগ থাকবে। হরিলুট করে সঞ্চিত কালো টাকা জায়েজ করার দরজা অবারিত করে দিলেন অর্থমন্ত্রী, যা অনৈতিক এবং নাগরিকদের প্রতি অবিচার বলে আমরা মনে করি।’
বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন রাখেন, ‘কোভিডকালে এতো কালো টাকা কারা আয় করেছে জাতি জানতে চায়? যদিও এরই মধ্যে সরকার দলীয় ও তাদের মদদপুষ্ট অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে পড়েছে। অপ্রদর্শিত আয়ের একটি বিরাট অংশ মানিলন্ডারিং হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোভাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। বছরে প্রায় লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়। প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। যে পরিমান অর্থ পাচার হয়েছে তা দিয়ে চারটি পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্ভব হতো।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।