শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার: সিবিআই অফিসে চরম উত্তেজনা



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৭ মে, ২০২১ ৩:০৫ : অপরাহ্ণ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নারদা ঘুষ কেলেংকারি মামলায় রাজ্য সরকারের পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমসহ তৃণমূল কংগ্রেসের তিন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে কলকাতার নিজাম প্যালেস কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) অফিসে। দলের তিন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে নিজাম প্যালেসে ছুটে যান পম্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত তিনি সেখানে বসে আছেন।

দলের তিন শীর্ষ নেতাকে ‘বেআইনিভাবে’ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তাকেও গ্রেফতার করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন মমতা। নাহলে তিনি সিবিআই অফিস থেকে বের হবেন না বলে জানান।

সাংবাদিকরা মমতাকে সিবিআই অফিসে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘ওদের (গ্রেপ্তারকৃত তৃণমূল নেতা) সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। যতক্ষণ না তারা আমাকে গ্রেপ্তার না করছে, ততক্ষণ আমি নিজাম প্যালেস ছাড়বো না।’

এর আগে আজ সোমবার (১৭ মে) সকালে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার (সিবিআই) হাতে গ্রেপ্তার হন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাবেক মন্ত্রী ও তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। এছাড়া একই অভিযোগে কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে কলকাতার নিজাম প্যালেস সিবিআই অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাদের গ্রেপ্তারের খবর শুনে নিজাম প্যালেসে জড়ো হন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। সিবিআই অফিস লক্ষ্য করে তাদের ইটবৃষ্টি শুরু হয়। কার্যত রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। সেখানে হাজির ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের একাধিক বিধায়ক। সিবিআই অফিসের ব্যারিকেড ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। এসময় সেখানে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের তোপের মুখে গ্রেপ্তার করা মন্ত্রী-নেতাদের আদালতে হাজির করে ভার্চুয়াল শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিআই।

তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে, প্রতিহিংসার কারণে শুধুমাত্র তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারণ অভিযোগ তালিকায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং মুকুল রায় থাকলেও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।

রাজ্যপালকে ‘রক্তচোষা’, ‘পাগলা কুকুর’ বলে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজাম প্যালেসে বিক্ষোভের খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মমতার নাম উল্লেখ করে তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘আপনাকে আমার অনুরোধ, সংবিধান মেনে চলুন। আইন ভাঙবেন না’। নিজাম প্যালেসে বিশৃঙ্খলার জন্য পুলিশকেই দায়ী করেছেন ধনখড়।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের মুহূর্তে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তৃণমূলের তিন নেতা ও আরেক সাবেক নেতার বিরুদ্ধে নারদা অর্থ কেলেঙ্কারি মামলা চালানোর অনুমতি দেন।

ফিরহাদ হাকিমকে তার চেতলার বাসভবন থেকে সিবিআই তুলে নেওয়ার সময় এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় তিনি বলেন, আদালতেই তিনি মোকাবিলা করবেন।

নারদা নামে একটি পোর্টাল ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গোপন ক্যামেরায় অভিযান বা স্টিং অপারেশন চালিয়েছিল, যাতে গোপন ক্যামেরায় ওই নেতাদের মোটা অঙ্কের ঘুষ নিতে দেখা যায় ।

এই ঘটনায় দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা সিবিআই পরে যে মামলা শুরু করে, সেটিই নারদা ঘুষ মামলা নামে পরিচিত।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৭ সালে মার্চে এই নারদা কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে।

সেই মামলায় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন চার মন্ত্রীসহ অন্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের আসামি করা হয়। কিন্তু মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে গেলে রাজ্যপালের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সেই লক্ষ্যে সিবিআই রাজ্যপালের কাছে অনুমতি চাইলে দীর্ঘদিন পর রাজ্যপাল এই চার নেতার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অনুমতি দেন সংবিধানের ১৬৩ ও ১৬৪ ধারামতে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর