রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৬ মে, ২০২১ ১২:২৮ : পূর্বাহ্ণ
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৬ মাস যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সংগঠনটির সামরিক শাখা ইয্যাদ্দিন আল কাসসাম ব্রিগেড হুমকি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের জন্য শিগগিরই বড় ধরণের পরিণতি অপেক্ষা করছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, গত সোমবার থেকে গাজায় আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনিরা।
খবরে বলা হয়, এ কয়দিন গাজা থেকে যেসব রকেট ছোঁড়া হয়েছে, তাতে পরিচিত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষের সময়ও একই ধরনের রকেট ছোঁড়া হয়েছিল। তবে এবার রকেট ছোঁড়ার ধরন পাল্টেছে তারা।
উজি রুবিন নামের একজন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি হামাস আগের প্রযুক্তিই ব্যবহার করছে। তবে এবারের রকেটগুলোর আকার ২০১৪ সালের চেয়ে ভিন্ন। এসব রকেটে ভারী ওয়ারহেড রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ইসরায়েলের মিসাইল ডিফেন্স অর্গানাইজেশনের সাবেক প্রধান।
হামাসের কাছে কী পরিমাণ অস্ত্র আছে?
সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের একজন সামরিক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, স্থল থেকে স্থলে আঘাত হানতে সক্ষম বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে হামাসের। সম্প্রতি ব্যবহার করা কর্নেট গাউডেড অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তারা মিশরের সিনাই উপদ্বীপ থেকে টানেলের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ অস্ত্রই গাজা উপত্যকার অভ্যন্তরে হামাস ও অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীর অস্ত্রাগারে তৈরি হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাস খুব গোপনীয়তার সঙ্গে অস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে। এজন্য তাদের কাছে আসলে কি পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে-তা অনুমান করা অসম্ভব। তবে সহজেই অনুমান করা যায় তাদের অস্ত্রাগারে বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার অস্ত্র রয়েছে, যা জেরুজালেম এবং তেল আবিব উভয়কেই লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে।
কাসাম (১০ কিলোমিটার) ও কুদস ১০১ (১৬ কিলোমিটার) এর মতো স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বিশাল মজুদ রয়েছে হামাসের। এছাড়া রয়েছে গ্রেড সিস্টেম (৫৫ কিলোমিটার) এবং সেজিলের (৫৫ কিলোমিটার) মতো ক্ষেপণাস্ত্রও। হামাসের অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা বেশিরভাগই এই স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। মর্টার ফায়ারের মাধ্যমে এগুলো শক্তিশালী করা যায়।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল হারজগ বলেছেন, হামাসের কাছে ৮-১০ হাজার রকেট থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সামরিক মুখপাত্র আবু ওবায়দাহ জানান, তারা নতুন আইয়াশ ২৫০ নামে নতুন একটি রকেট ব্যবহার করেছে। এটা তেলআবিবের কাছে আঘাত করেছে। মাঝারি পাল্লার এই রকেটটি ১৫০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে বলে জানিয়েছে হামাস।
কিছু বিশ্লেষক বলছেন, হামাস এবং ইসলামি জিহাদ কি পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র মজুদ করেছে তা সঠিকভাবে জানা কঠিন। তবে তাদের ভান্ডারে অস্ত্র বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। ২০১৪ সালের চেয়ে মজুদ বাড়িয়েছে হামাস।
কোথায় থেকে আসে হামাসের অস্ত্র?
গোয়েন্দা বিশ্লেষক হিঞ্জের মতে, কিছু অস্ত্র বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেছে হামাস। এর মধ্যে ফজর-৩ ও ফজর-৫ ইরান থেকে এবং এম৩০২ রকেট সিরিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে তারা। তবে তারা নিজেরাই এখন রকেট তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। এগুলোর রেঞ্জ প্রায় ১০০ মাইল, সেক্ষেত্রে প্রায় পুরো ইসরায়েলেই আঘাত হানতে সক্ষম হামাস।
হামাস বা অন্যান্য গোষ্ঠী মিশরের সীমান্ত নিয়ে চোরাপথে অস্ত্র নিয়ে আসতো। কিন্তু ২০১৩ সালে ক্ষমতা দখলের পর প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি সেই পথ বন্ধ করে দেন। তাই বিদেশ থেকে পুরো একটি অস্ত্র আনা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য।
যদিও সেপ্টেম্বর মাসে আল জাজিরার এক অনুষ্ঠানে হামাসের নেতারা দাবি করেন তারা ফজর মিসাইল এবং রাশিয়ার করনেট অ্যান্টিট্যাংক শেল স্থল ও সমুদ্রপথে গাজায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এখন নিজেরাই অস্ত্রশস্ত্র বানাচ্ছে হামাস।
গাজায় তাদের নিজস্ব কারখানায় এসব অস্ত্র বানায় হামাস। এজন্য দেশীয় এবং বিদেশ থেকে পাচার করে আনা সরঞ্জাম ব্যবহার করে তারা। এজন্য তারা ইরান এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ গ্রুপের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে থাকে।
সেন্টার ফর স্ট্রাটিজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন ফেলো এবং মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর ইয়ান উইলিয়ামস বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে গাজা থেকে যে রকেট ছোঁড়া হয়েছে, তাতে হামাসের অস্ত্র ভান্ডারে ইরানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ইসরায়েলি দখলদারির অবসানের দাবিতে ১৯৮৭ সালে হামাস গঠিত হয়। হামাস হল হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া এর সংক্ষিপ্ত রূপ। তাদের চাওয়া হলো, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে বর্তমান ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে গঠিত একক ইসলামি রাষ্ট্র। কট্টর ইসরায়েলবিরোধী আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনের নেতৃত্বে আবদেল আজিজ আল-রান্তিসি ও মাহমুদ জহর হামাস প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৪ সালের মার্চে গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন আহমাদ ইয়াসিন। পরের মাসেই নিহত হন আজিজ আল-রান্তিসি। সংগঠনটির বর্তমান প্রধান ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ার। হামাসের ইজ্জেদিন আল-কাশেম ব্রিগেডস নামে একটি সামরিক শাখা রয়েছে।
২০০৫ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার পরের বছরই ফিলিস্তিনি আইন পরিষদ প্যালেস্টিনিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের (পিএলসি) নির্বাচনে জয়ী হয় হামাস। এরপর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ফাতাহর সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০০৭ সালের জুনে গাজায় হামাস ও ফাতাহর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই বেধে যায়। এরপর হামাস গাজায় সরকার গঠন করে। এখনো গাজার শাসনক্ষমতায় তারা। তবে পশ্চিম তীরের শাসনক্ষমতা ফাতাহর হাতে।