রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৪ মে, ২০২১ ১০:৪৫ : পূর্বাহ্ণ
ফিলিস্তিনের গাজায় নিরপরাধ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় বিমান হামলার পাশাপাশি এবার স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। দেশটির বিমান ও স্থল বাহিনী বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ফিলিস্তিনিদের ওপর এই আক্রমণ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের ‘অপারেশন গার্ডিয়ানস অব দ্য ওয়াল’ নামের এই সশস্ত্র অভিযানে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সাত শতাধিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় ড্রোনও ব্যবহার করছে ইসরাইল।
ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, গত চারদিনে ফিলিস্তিনে যত হামলা চালানো হয়েছে তার ৯৫ শতাংশই ছিল আকাশপথে। এতে হামাসের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে কয়েক বছর লেগে যাবে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
বৃহস্পতিবার সকালেই স্থল হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। রাত থেকে সেই হামলা শুরু হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার গাজা সীমান্তে ইসরায়েল বিপুল পরিমাণ সেনা ও ট্যাঙ্ক মোতায়েন করার খবর পাওয়া যায়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলের দুটি পদাতিক ইউনিট এবং একটি সাঁজোয়া ইউনিট অবস্থান করছে। এছাড়া আরও সাত হাজার সেনা রিজার্ভ রাখতে বলা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানৎজ তাদের সেনাবাহিনীকে শক্তি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন শিশু রয়েছে। দক্ষিণ লেবাননের একটি এলাকা থেকে ইসরায়েলে অন্তত তিনটি রকেট ছোঁড়া হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর টুইটার একাউন্টে বলা হয়, ‘ভূমি ও আকাশপথে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।’
এই হামলার পর গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে তিন ছেলেসহ এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৮০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
হামাসের উপর্যুপরি রকেট হামলায় ইসরায়েলে এক ভারতীয় ও ছয় ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি হামাসের কাছ থেকে বিপুল মূল্য আদায় করবেন। আমরা আরো তীব্রবেগে হামলা চালাব। শেষ কথা এখনো বলা হয়নি। যত সময় প্রয়োজন, অভিযান চলবে।
আর হামাসের সামরিক মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছেন, তারা ইসরায়েলি স্থল বাহিনীর হামলাকে ভয় পায় না। তারা এগিয়ে এলে জীবিত বা মৃত্যু কোনো ইসরায়েলি সৈন্যকে পাকড়াও করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে এদিন সকালে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ফিলিস্তিনিরা। এর আগে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ও সিনাগগে আগুন দেন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা। কোথাও কোথাও ফিলিস্তিনিদের দোকান-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সংঘাত বন্ধে সমঝোতা করতে মিসরের একটি দল ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব পৌঁছেছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আগামী রোববার তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ এক বিবৃতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন অবিলম্বে গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।