নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৬ মে, ২০২১ ৮:৪৫ : অপরাহ্ণ
সরকারের যে নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে, তাতে অন্যতম দুটি শর্ত ছিল-মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। আর এই দুই শর্তেই আটকে গেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিদেশযাত্রা। এই দুই শর্ত শিথিলের সুযোগ আছে কি-না, তা পর্যালোচনা করছে সরকার।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছিল। এখানে দুটি নির্দিষ্ট শর্ত দেওয়া ছিল। শর্তগুলি মেনে তারা স্থগিতাদেশ গ্রহণ করেছিলেন এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেছিলেন। এখন এই শর্ত শিথিল করা যায় কিনা, তা পর্যালোচনা করতে হবে। তবে সে বিষয়ে আজ কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। দ্রুত এ বিষয়ে মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে আইমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে আভাস দিয়েছিলেন যে, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনটি বৃহস্পতিবার বিকেলে তার কাছে উত্থাপন করা হলে দ্রুতই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত দেয়া হতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইমন্ত্রী বলেন, ৪০১ ধারার কাজ যখন সম্পন্ন হয়েছে, তখন এটা নির্বাহী আদেশে হয়েছিল। এখন আদালতের কিছু করার নেই। এখন দেখতে হবে ৪০১ ধারায় যখন আমরা কার্যসম্পাদন করে দিয়েছি; সেক্ষেত্রে এ শর্তগুলি শিথিল করার কোনো সুযোগ আছে কিনা।
গতরাতে সরকারের অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে লিখিত আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। লিখিত আবেদনটি পাওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক হলেও খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেই ‘শর্ত শিথিল’ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।
করোনা আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। তার অক্সিজেন লেভেল ওঠানামা করছে। করোনা ছাড়াও বেশ কিছু জটিল রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া বুধবার সকাল থেকে কিছুটা শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন। তার ডায়াবেটিসের মাত্রা ওঠানামা করছে। এ অবস্থায় তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত ৩ মে সকালের দিকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় তার করোনা টেস্টের রিপোর্টও পজিটিভ আসে। পরে ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে।
৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। প্রায় আড়াই বছরের মতো কারাগারে ছিলেন তিনি। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়। দুই দফায় এ মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।