বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ক্যাম্পাস রাজনীতি

চমেক ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হামলায় উত্তেজনা: সেদিন কী ঘটেছিল



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৯ এপ্রিল, ২০২১ ৫:১০ : অপরাহ্ণ

বহিরাগতদের হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাস। গেল মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ক্যাম্পাসে প্রথমে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ক্যাম্পাসে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিন ইন্টার্ন চিকিৎসক আহত হয়। এ ঘটনার জেরে চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুধবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছে। এ নিয়ে সেখানে গত দুই দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

চমেক হাসপাতালের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক ইফতার সামগ্রী কিনে হোস্টেলে ফেরার পথে ক্যাম্পাসে তাদের প্রতিপক্ষ এক ছাত্রলীগ কর্মী তাকে উস্কানিমূলক কথা বলে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক তার সঙ্গী ছাত্রলীগের অপর পক্ষের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ক্যাফেটোরিয়ায় গিয়ে প্রতিপক্ষের কর্মীদের মারধর করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলা সংঘর্ষে জয়, বোরহান ও নিপু নামে তিন ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়। আহত ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। আর হামলাকারীরা সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যার পর চকবাজার থেকে ছাত্রলীগের অন্তত দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী চমেক ক্যাম্পাসে ডা. মিজান হোস্টেলে ঢুকে নাছিরের অনুসারী সেই ইন্টার্ন চিকিৎসদের ওপর হামলা চালায়। তারা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর করে। হামলায় চমেক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াসিম সাজ্জাদ রানাসহ আরও দুজন আহত হয়। আহত অবস্থায় চমেক পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা তাদের কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেছেন।

হাসপাতালের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, চকবাজার এলাকার যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া র‍্যাবের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নূর মোস্তফা টিনুর নেতৃত্বে বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মীরা এই হামলা চালায়। এ সময় টিনুর সাথে চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজও উপস্থিত ছিলেন।

নূর মোস্তফা টিনু ও সুভাষ মল্লিক সবুজ আগে সাবেক মন্ত্রী ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসির বলয়ে থাকলেও এখন তারা শিক্ষা-উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলে সাথে ভিড়েছেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর নূর মোস্তফা টিনুকে র‍্যাব চকবাজার এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি শটগান ও ৭২টি গুলি উদ্ধার করা হয় তখন। এই ঘটনায় র‍্যাব পাঁচলাইশ থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করে। গত ১০ ডিসেম্বর মামলাটির অভিযোগপত্রেও নূর মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।

জানা গেছে, টিনু গ্রেপ্তার হওয়ার আগে চকবাজার এলাকায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

গত ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান টিনু। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর টিনু চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান নওফেলের বলয়ে যুক্ত হন।

নূর মোস্তফা টিনুর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, মেডিকেলে আমাদের নেতার ছোট ভাইয়েরা ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের এক ছোট ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। শুধু তো আমরা না, সাইফুল আলম লিমনও তো তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সেখানে গিয়েছিল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ তো কারও বাপ দাদার সম্পত্তি না। এখানে কি অন্য কারও রাজনীতি করার অধিকার নেই?

সেদিন সংঘর্ষের সময় চমেক ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সম্পাদক সাইফুল আলম লিমন। রাজনীতি সংবাদকে তিনি বলেন, সেদিন ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম। এটা প্রতিপক্ষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

এ ঘটনায় বুধবার রাত (২৮ এপ্রিল) ১০টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেছেন ডা. হাবীবুর রহমান নামের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে অভিজিৎকে। এছাড়া চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজসহ আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মোখলেছুর রহমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, চমেকে বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় এক ইন্টার্ন চিকিৎসক মামলা করেছেন। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবির বিষয়ে তারা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও কলেজের ১৫ জন ছাত্রকে বহিস্কারের দাবি জানিয়েছে। আমরা তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। এরপর আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. উসমান গণি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ক্যাম্পাসে এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো।

জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৩০৭ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন। এই করোনাকালীন সময়ে তাদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।

উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট চকবাজার থানাধীন চট্টেশ্বরী রোডের চমেক ছাত্রাবাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে মেডিক্যাল ছাত্রদের হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছিল।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর