নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৯ এপ্রিল, ২০২১ ১১:১৭ : পূর্বাহ্ণ
ঢাকার গুলশানে এক তরুণীকে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’ দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর হাইকোর্টে যে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন সেটির শুনানি আজ হয়নি।
একইসঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য আগাম জামিন শুনানি বন্ধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বর্তমান লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোন ধরনের আগাম জামিনের শুনানি গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ভার্চুয়ালি এই জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিলো। আবেদনটি কার্যতালিকার ১৪ নম্বরে রাখা ছিলো।
বসুন্ধরা এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের আগাম জামিনের শুনানি নিয়ে আদালতের আদেশ কী হয় সেদিকে অনেকের দৃষ্টি ছিল।
আদালতের শুরুতেই বিচারপতি মামনুন রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতি এবং বিধিনিষেধ চলাকালে আদালত কোনো আগাম জামিনের ওপর শুনানি করা হবে না। ভুলবশত কিছু আগাম জামিনের আবেদন আজকের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৮ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজার মাধ্যমে আগাম জামিন আবেদন করেন সায়েম সোবহান আনভীর।
গত সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এক কলেজ শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই কলেজ শিক্ষার্থী তার বোনকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন তিনি ‘ঝামেলা’য় আছেন। তখন তার বোন ঢাকায় আসেন এবং সেই ফ্ল্যাটে যান। ভেতর থেকে দরজা না খোলায়, ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে যাওয়ার পর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তার মরদেহ ঝুলতে দেখা যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
গতকাল ভোরে ওই শিক্ষার্থীর বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া’র অভিযোগ এনে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সায়েম সোবহানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই কলেজ শিক্ষার্থীর। প্রতি মাসে এক লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে সায়েম সোবহান তাকে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিলো। নিয়মিত ওই বাসায় সায়েম যাতায়াত করতো। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতো।
কলেজ শিক্ষার্থীর বোন অভিযোগ করেছেন, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিলো। একটি ছবি ফেসবুকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সায়েম সোবহান তার বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
এরইমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সিসিটিভির ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত। মুনিয়ার লেখা ছয়টি ডায়েরিও হাতে পেয়েছে পুলিশ। যাতে আনভীরের সঙ্গে সম্পর্ক, মনোমালিন্য, জীবন সম্পর্কে হতাশার কথা উল্লেখ রয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদনে আত্মহত্যার তথ্য রয়েছে; তবে আত্মহত্যায় প্ররোচনা রয়েছে কী না, তা যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) অভিযুক্ত সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। সেই সঙ্গে ৩০ মের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দেয়া হয়।
বসুন্ধরার এমডি দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লেও, পুলিশ বলছে, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, তিনি দেশের ভেতরেই রয়েছেন।