রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৮ এপ্রিল, ২০২১ ৬:৫০ : অপরাহ্ণ
‘আসামীর গ্রেপ্তার..এটা মনে হয় আমার আশা করাটা দুষ্কর’
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশানে একজন তরুণীকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার’ জন্য যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই অভিযোগের ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ কাজ শুরু করেছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন ঢাকার গুলশান অঞ্চলের উপ-পুলিশ কমিশনার।
বসুন্ধরার এই কর্মকর্তা দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়লেও, পুলিশ বলছে, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, তিনি দেশের ভেতরেই রয়েছেন।
আর মৃত তরুণীর পরিবার জানিয়েছে, মামলা করার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
মৃত তরুণীর বোন ‘আত্মহত্যার প্ররোচনার’ অভিযোগ তুলে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার ভোররাতে একটি মামলা করেন।
সেই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ঢাকার গুলশান অঞ্চলের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের এখন যে কাজটি করতে হচ্ছে, এই যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক সাক্ষ্য, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা বস্তুগত সাক্ষ্য- সকল বিষয়কে আমাদের গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।’
তিনি জানান, এই মামলার অভিযোগ হচ্ছে, ‘আত্মহত্যার প্ররোচনার’ অভিযোগ। তিনি বলেন এক্ষেত্রে দুইটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে, অভিপ্রায়, আরেকটি হচ্ছে প্ররোচনা।
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিবিসিকে বলেন, ‘এই জন্য মামলার যে অভিযোগ এসেছে, অভিযুক্ত এবং ভিকটিমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে, সেগুলো যাচাই বাছাই করা হবে। মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসগুলো বিশ্লেষণ করে এবং মৃতদেহের পোস্টমর্টেম ও ফরেনসিক রিপোর্টের মাধ্যমে ওই তরুণীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিকটিমের মোবাইল ফোন, সেখান থেকে তথ্য উদ্ধারের চেষ্টার পাশাপাশি অন্যান্যভাবেও তাদের মধ্যে বিভিন্ন ভাবে সম্পর্কের যে অভিযোগ এসেছে, এজাহারে যে পয়েন্টগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে, সেই ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সংশ্লিষ্টতা, সেগুলো আমাদের বেশ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হচ্ছে।’
মামলায় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘এই মামলার অভিযোগ হচ্ছে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা। এই জন্য আমাদের যে কাজটি করতে হচ্ছে, (সেটা হল) প্ররোচনার বিষয়টি যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা। না হলে মামলার সঠিক তদন্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এই জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি প্ররোচনার বিষয়টিকে যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করার জন্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণদি সংগ্রহ করা, বিশ্লেষণ করা- সেই সঙ্গে অভিযোগের মানানসই একটি বিষয় খুঁজে বের করার ওপর।’
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের বিষয়টি তারা পরে ভাবা হবে। যখন পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আসবে, তখন দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা অবশ্যই নেবো।’
মামলাটি হওয়ার পর আনভীরের বিদেশযাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে একটি আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।
কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে যে, বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপনে দেশের বাইরে চলে গেছেন।
এই প্রসঙ্গে পুলিশের কাছে কী তথ্য আছে, জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, বলেন, ‘বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা একেবারেই ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা। এখানে কোন্ যাত্রী কোন্ পাসপোর্ট ব্যবহার করে, শনাক্ত করণ পদ্ধতি কী, সেটা ডিজিটালি অন্তর্ভুক্ত থাকে। একজন যাত্রী যদি দেশের বাইরে যান বা বাইরে থেকে দেশে আসেন, সেটা ডিজিটালি নিবন্ধিত থাকে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের যে ডাটাবেজ, সেই ডাটাবেজ অনুযায়ী, অভিযুক্ত যিনি, তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি, তিনি বাংলাদেশেই আছেন।’
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা মো. আবু তৈয়ব বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, যেহেতু এই বিষয়ে মামলা হয়েছে, তারা আইনগতভাবেই এগোবেন।
তিনি আরও বলেন, এই মামলা করা এবং পুরো ঘটনাকে তারা বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসাবে দেখছেন।
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিযুক্ত করে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনার দেয়ার’ মামলা করার পর হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন মামলার বাদী নুসরাত জাহান।
তিনি মৃত তরুণীর বড় বোন।
বিবিসি বাংলাকে নুসরাত জাহান বলেছেন, ‘কালকে রাত ১২টার, সাড়ে ১২টা থেকে আমি খুব ডিপ্রেসড। আমাকে বিভিন্নভাবে ফোন দিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলা হচ্ছে। অনেক হুমকির মুখে আছি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।’
তিনি দাবি করেন, অনেক কিছুই তো প্রুফ হয়ে গেছে। যদি প্ররোচিত মৃত্যু হয়ে থাকে,তাহলে কে প্ররোচিত করেছে? এখন শুধু বিচারের অপেক্ষা।
‘আসামীর গ্রেপ্তার..এটা মনে হয় আমার আশা করাটা দুষ্কর’ এই মন্তব্য করে নুসরাত জাহান সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র: বিবিসি