রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১৯ এপ্রিল, ২০২১ ১০:৫৯ : অপরাহ্ণ
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে কয়েকজন পুলিশ ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে এক ডাক্তারের উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বিডিএফ বিবৃতিতে চিকিৎসককে হেনস্তায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের নিরাপত্তাচৌকিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসকের সাথে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের বাকবিতণ্ডার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি পেশাজীবী সংগঠন পাল্টাপাল্টি এই বিবৃতি দিয়েছে। ওই দিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ওই চিকিৎসকের গাড়ি আটকে পরিচয়পত্র দেখতে চান। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ দুষছেন চিকিৎসককে, কেউ কেউ পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে, কেউবা আবার উভয়পক্ষের আচরণকেই দায়ী করছেন। বলছেন, এখানে উভয়পক্ষকেই সংযত হওয়া দরকার ছিল।
ডক্টরস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. শাহ মো. জাকির হোসেন সুমন স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ১৮ই এপ্রিল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইদা শওকত জেনীর ব্যবহৃত গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো, স্টিকার এবং বিশেষ অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তা অন্যায়ভাবে আটকানো হয়। তিনি নিজের পরিচয় দেয়ার পরেও বাগবিতণ্ডায় জড়ানো হয়। এছাড়াও তাকে উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া চিকিৎসক’ এবং ন্যক্কারজনকভাবে ‘পাপিয়া’ নামে অভিহিত করা হয়। পরবর্তীতে সেই বাকবিতণ্ডার দৃশ্য খণ্ডাকারে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইলেট্রনিক মিডিয়াতে ছড়ানো হয়। এতে সারা দেশের চিকিৎসক সমাজের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) উক্ত ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে করোনাকালীন সময়ে ফ্রন্টলাইনার হিসাবে চিকিৎসকদের মনোবল ধরে রাখা আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।
এমতাবস্থায় উক্ত ভিডিও খণ্ডাকারে কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে ভাইরাল করেছে, সেটি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। উপরন্তু লকডাউন চলাকালীন সময়ে চিকিৎসকবৃন্দ যাতে নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা একান্ত কাম্য। উক্ত ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে লকডাউনের সময়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘন করে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যেতে হেনস্তার সঙ্গে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায় বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন।
চিকিৎসকের অসৌজন্যমূলক আচরণের কথা উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ওই ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, পুলিশের উপস্থিতিতে একজন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনৈক চিকিৎসককে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তিনি অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছ থেকে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি শুধু এই পুলিশ সদস্যদেরই অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন যা মিডিয়া চিত্রে প্রতীয়মান। শুধু তাই নয়, তিনি নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। উক্ত চিকিৎসক বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদকালে যে শব্দ প্রয়োগ করেছেন তা অত্যন্ত অরুচিকর ও লজ্জাজনক। তিনি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ‘তুই’ বলে সম্মোধন করেছেন এবং আর ‘আমি কি সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারামজাদা’ বলে হুমকি দিয়েছেন।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসক কর্তৃক অপেশাদার অরুচিকর আচরণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি পুলিশ অত্যন্ত মর্মাহত। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লঙ্ঘন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিকট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এ ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ডা. সাঈদা শওকত দায়িত্ব পালন শেষে অত্র প্রতিষ্ঠানের লোগো সম্বলিত গাড়িতে আরোহিত অবস্থায় এলিফ্যান্ট রোডে পৌঁছার পর কর্তব্যরত পুলিশের টহলদল কর্তৃক তাকে থামানো হয়। পরিচয় চাওয়া হলে তিনি নিজেকে চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকার পরিচয় জানান। পক্ষান্তরে, উক্ত টহলদল তার চিকিৎসক পরিচিতিকে ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করে। অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। এ সময় তিনি তার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত অ্যাপ্রোন পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের আচরণে এবং তার পরিচিতি ভুয়া হিসাবে অভিহিত করার প্রেক্ষিতে ডা. সাঈদা শওকত বিক্ষুব্ধ হন এবং পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন, যার খণ্ডকালীন সচিত্র প্রতিবেদন সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে বিএমএ
চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে এলিফ্যান্ট রোডে চিকিৎসককে হেনস্তায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।
বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী ওই চিঠিতে সই করেছেন। তারা লিখেছেন, চিকিৎসকের গাড়িতে প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো ছিল এবং পরনে তার নাম লেখা গাউন ছিল। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে আক্রমণাত্মক জেরা করে উত্ত্যক্ত ও হেনস্তা করা হয়। ওই দৃশ্য সারা দেশের মানুষ দেখেছে।
বিএমএ চিঠিতে আরও লিখেছে, ‘চিকিৎসকের এতগুলো পরিচয় দেওয়ার পরও কেবল মুভমেন্ট পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। সচিবালয় কিংবা পুলিশ কিংবা সাংবাদিক লেখা স্টিকারযুক্ত কোনো গাড়ি কোথাও আটকানো হয়েছে বা থামানো হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কোনো নজির নেই।’