রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৮ এপ্রিল, ২০২১ ৫:০০ : অপরাহ্ণ
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করার গুজব ছড়িয়ে পড়লেও আজ বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) তিনি ফেসবুক লাইভে এসে সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘যে একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ অনিবার্যভাবে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।’ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে উদ্দেশ্য করে মামুনুল হক বলেন, ‘আগুন নিয়ে বেশি দিন খেলা করবেন না। এই আগুন নিয়ে খেলার পরিণাম কারো জন্য শুভ পরিণতি ডেকে আনবে না।’
আজ বিকেল ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে প্রায় ৪০ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টের ঘটনা প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি আশা করিনি যে, বাংলাদেশ এমন একটা অবস্থায় পৌঁছে গেছে, সন্ত্রাসীরা এমন একটি নিরাপদ জায়গাতেও এভাবে হামলা করতে পারে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য। তাদের যদি কোনো যাচাই বাছাইয়ে বিষয় থাকতো, তারা আমার অনুমতি নিয়ে আমার কক্ষে প্রবেশ করতে পারতেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য যদি ৩ জন থাকে, সরকার দলীয় ক্যাডার ছিলো ৩০ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সরকার দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে কেন আমার উপর চড়াও হলো, কেন আমাকে হেনস্তা করলো? আমি যদি রুখে না দাঁড়াতাম, তবে আমি নিশ্চিত তারা আমাকে আরো ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতো। তারা আমার পোশাকের উপর, দাড়ির উপর পর্যন্ত হামলা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমার অনুমতি ছাড়া জান্নাত আরা ঝর্ণার কাছ থেকে যে বক্তব্য ধারণ করেছেন, কার অনুমতি নিয়ে তারা সেটা জনসমক্ষে প্রচার করেছে ? আমার পর্দানশীন স্ত্রীর পর্দা তারা লঙ্ঘন করেছে। এর জন্য আমি জনতার আদালতে বিচার দাবি করলাম। আইনানুগভাবেও বিচার চাইবো। এতো এতো ফোনালাপ যে আপনারা ফাঁস করলেন, প্রমাণ কি করতে পারলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা আমার স্ত্রী নয়?’
ফোনালাপ ফাঁস হওয়া প্রাসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, ‘আমার স্ত্রীদের সাথে আমি কখন, কোন কথা বলেছি, আমার স্ত্রীদের সাথে আমি কীভাবে কথা বলবো, কোন ভাষায় কথা বলবো সেটা ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার। সে বিষয়ে অন্য কাউকে নাক গলানোর অধিকার রাষ্ট্র ও আইন কাউকে দেয়নি। আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে আমার ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। এটি যেমন দেশের আইনেও অপরাধ তেমনি ইসলামী বিধানেও চরম গুনাহের কাজ। আমার ব্যক্তিগত ফোনালাপ যারা ফাঁস করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি দাবি করেন, ‘জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমানকে জোর করে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভিডিও বার্তা দিতে বাধ্য করা হয়েছিলো। লিখে দেওয়া স্ক্রিপ্ট তাকে ক্যামেরার সামনে বসে পড়তে বলা হয়।’
এই হেফাজত নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসন যে পরিস্থিতি তৈরি করছে, এর মূল উদ্দেশ্যই হলো ইসলামের পক্ষে আমার সোচ্চার কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া। আমার মনে হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীলদের পারষ্পরিক আলাপচারিতার গোপন রেকর্ড ফাঁস করার যে ধারাবাহিক সিরিজ শুরু হয়েছে, এর মাধ্যমেও তাদের উদ্দেশ্য দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হয়েছে। তারা চাচ্ছে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বকে কলুষিত করতে, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কলহ তৈরী করতে।’
মওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একইভাবে তার চরিত্রের উপরও কালিমালেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
মামনুল হক বলেন, ‘চরিত্র হননের যে অশুভ খেলা শুরু হয়েছে, সেটা যদি চলতে থাকে তাহলে কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা কী চিন্তা করেছেন? ইতোমধ্যেই কী দেখছেন না, কতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কতো ব্যক্তিগত বিষয় জনসমক্ষে এসে পড়ছে। এটা দেশের শান্তি শৃঙ্খলা, স্থিতিশীল পরিবেশকে, সভ্য সমাজের ভদ্রতাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করবে।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবরুদ্ধ হন মাওলানা মামুনুল হক। ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন তিন। নাম বলেন, আমেনা তাইয়্যেবা। পরে জানা যায়, এটি তার প্রথম স্ত্রীর নাম। সঙ্গে থাকা নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। অবরুদ্ধ মামুনুল হককে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে সেখান থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
রিসোর্টে হেফাজত কর্মীদের ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে সোনারগাঁও থানায় তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। দুটি মামলা পুলিশ বাদী হয়ে ও অপর মামলাটি আহত এক সাংবাদিক বাদী হয়ে করেছেন। এই তিন মামলায় মামুনুল হককে প্রধান আসামি করা হয়েছে।