নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১ এপ্রিল, ২০২১ ৬:৩৫ : অপরাহ্ণ
সংসদের শোক প্রস্তাবের আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তিনি মেধাবী ছিলেন। তা দেশের কাজে লাগাননি। তিনি সব সময়ই সরকারঘেঁষা ছিলেন। যারা ক্ষমতায় থাকত, তিনি সব সময় সেই দিকে থাকতেন।’
আজ বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের প্রথম দিন সংসদে শোক প্রস্তাবের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ মওদুদ আহমদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘তিনি কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, আর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী ছিলেন না। এছাড়া মওদুদ কখনও ছাত্রলীগ করেননি। পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের মেয়ের জামাই হিসেবে তিনি সব সময় সহানুভূতি পেতেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (মওদুদ) তার জীবনীতে লিখেছেন, তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবী ছিলেন। এ তথ্য সঠিক নয়। তবে যারা এই মামলার আইনজীবী ছিলেন; ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম; তিনি তাদের সঙ্গে ঘুরতেন এবং সারাক্ষণই থাকতেন। তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না।’
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাচালে আইনি লড়াইয়ের স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বাবা যখন সেনানিবাসে আটক তখন, ড. কামাল, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, মওদুদরা বাবাকে প্যারোলে মুক্তির চেষ্টা করছিলেন। তখন আমার মা দৃঢ়চিত্তে এর বিরোধিতা করে আমার মাধ্যমে মেসেজ পাঠায়। আমি সেই মেসেজ নিয়ে সেনানিবাসে যাই। সেখানে তাজউদ্দীন আহমেদসহ আমাদের আরও অনেক নেতা ছিলেন। আমি মায়ের মেসেজ পৌঁছে দেই। এরপর আমি বাড়ি চলে আসি। আমি দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মওদুদ আমার কাছে আসেন। আমিরুল ইসলাম আমাকে বলেন, ‘তুমি কেমন মেয়ে যে বাবার মুক্তি চাও না?’ মওদুদ তখন সায় দিয়েছিলেন। তখন আমি তাদের বলেছিলাম, বাবা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বের হয়ে আসবেন। আপনারা বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।’
কিছু একটা পাচারের অভিযোগে ১৯৭৩ সালে মওদুদ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন পল্লীকবি জসীম উদদীন আমাদের বাড়ি, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে এসেছিলেন। পরে বাবা তাকে ছেড়ে দেন।’
মওদুদের স্ত্রী কবি জসীম উদদীনের মেয়ে হাসনা মওদুদের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (মওদুদ) মৃত্যুর পর আমি হাসনাকে কল করেছিলাম। কথা বলেছি। শোক জানিয়েছি।’
মওদুদ আহমদ শেষ জীবনে বিএনপি করলেও এর আগে জাতীয় পার্টির শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের আমলে পোস্ট মাস্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মওদুদ আহমদ। ১৯৭৫ সালের পর জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে বিএনপি গঠন করলে মওদুদ যোগ দেন সেই দলে। পরে এরশাদ একই পথে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মওদুদ যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি আবার চলে আসেন বিএনপিতে। গত ১৬ মার্চ মারা যান এই রাজনীতিক।