চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার এক আইনজীবী।
আজ বৃহস্পতিবার (১এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থি আইনজীবী কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ প্রশ্ন রাখেন, ‘চকবাজার থানার একটি চাঁদাবাজির মামলায় ডিবি পুলিশ বুধবার বিকেলে ডা. শাহাদাতকে নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল থেকে আটক করে। কিন্তু কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া দুইটা মামলার আদালতে পাঠানো ফরোয়ার্ডিংয়ে ডা. শাহাদাতকে পলাতক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তিনি যদি পলাতক থাকেন, পুলিশ তাকে অন্য একটি মামলায় কীভাবে গ্রেপ্তার করলো?’
কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া দুইটা মামলার ভিত্তি নিয়ে বিএনপিপন্থি এই আইনজীবী প্রশ্ন রাখেন-‘কোতোয়ালী থানার দুই মামলার ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে, সার্কিট হাউজ ও নাসিমন ভবনের সামনে। একই লোক একবার সার্কিট হাউজে, আরেকবার নাসিমন ভবনের সামনে একই সময়ে উপস্থিতি দেখাচ্ছে? আবার তাকে একই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল থেকে। এটা কীভাবে সম্ভব?’
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর কাজীর দেউড়ি নূর আহমদ সড়ক এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ বিএনপির ২০ নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীকে আটক করে। এ ঘটনার পর সন্ধার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার ট্রিটমেন্ট হাসপাতালের ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে ডা. শাহাদাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার বিকেলে চকবাজার থানায় নগর বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সহ সম্পাদক লুসি খানের দায়ের করা কোটি টাকার একটি চাঁদাবাজির মামলায় শাহাদাতকে গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি পুলিশ।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ প্রশ্ন তুলেন, ‘কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই কীভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগকে মামলা হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হলো? এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক শত্রু পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে মেয়র নির্বাচনে সৃষ্ট ইমেজ ধ্বংস করার জন্য মামলাটি করেছেন লুসি খান।’
কাজীর দেউড়ি মোড় ও নূর আহমদ সড়কে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ডা. শাহাদাত হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। কাজীর দেউড়ি মোড়ে ট্রাফিক বক্সে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা করে ট্রাফিক পুলিশ। আর কোতোয়ালি থানা পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অপর মামলাটি দায়ের করে। এ মামলায় শাহাদাতসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা বলেছেন, চট্টগ্রামে সরকার বিরোধী আন্দোলন দমিয়ে রাখতেই ডা. শাহাদাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের স্বীকার বলেও তারা দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এম এ আজিজ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ডা. শাহাদাত হোসেন একজন পরিছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। তিনি একজন পেশাজীবী চিকিৎসক। যিনি বিগত চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করে জনতার মেয়র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। যিনি মানুষকে বিনা টাকায় চিকিৎসা করেন, সাহায্য করেন; এমন একজন জনপ্রিয় নেতাকে বিনা-কারনে তার চেম্বার থেকে রোগী দেখার সময় পুলিশ প্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা হাস্যকর, মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ। যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের স্বীকার।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক এড. এ.এস.এম বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এনামুল হক এনাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ.এম নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান প্রমুখ।