রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ৪:০০ : অপরাহ্ণ
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনা নয়, তাকে কারাগারে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে’-এই অভিযোগ করেছে বিএনপি। আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘যারা স্বাধীনভাবে সামাজিকমাধ্যমে নিজের মতপ্রকাশের চেষ্টা করছেন, তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে, নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মূলত মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুশতাক লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারি, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না, তিনি একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের কাছে প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী এই ছাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যাওয়ায় অকালে তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হলো। মুশতাক তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে আইন-কানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারা দেশে এক শ্বাসরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। জাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্য বাকশালী শাসন জারি রাখা হয়েছে, যাতে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সব বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়ারুপ ধারণ করেছে। সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল এবং মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষরা। নজিরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন ব্লগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।’
এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি ভয়াবহ হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুশতাকের মৃত্যুতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে। তার মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্বশাসিত ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত।’