রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন
প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৬:১৫ অপরাহ্ণ
মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। আজ (২২ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সংসদ সচিবালয় এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে।
স্বাধীনার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সংসদ সদস্যের বিদেশে আটক ও ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পর পদ হারানোর ঘটনা এটিই প্রথম।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে গত ২৮ জানুয়ারি ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্থলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় ২৭৫ লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ থেকে তার আসন (লক্ষ্মীপুর-২) শূন্য হয়েছে। গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির ১৭৮ (৪) বিধি অনুযায়ী লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের আসন শূন্য সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো।
গত বছরের ৬ জুন কুয়েতের বাসা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে তার বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলা করা হয়। অভিযোগের সঙ্গে জড়িত থাকায় গত ২৮ জানুয়ারি পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন কুয়েতের একটি আদালত। পাশাপাশি তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল বা ৫৩ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। বর্তমানে পাপুল কুয়েতের কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে, নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ দাখিল করায় পাপুলের সংসদ সদস্য পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া।
গত বছরের ৯ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাংসদ পাপুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের বিবরণ চেয়ে নোটিশ দেয়। তাদের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন এবং আয়কর রিটার্নের কপি ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর পাপুলের পরিবারের ৮টি ব্যাংকের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব, ৩০ একরের বেশি জমি, গুলশানের ফ্ল্যাটসহ দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করে দুদক। তার আগে ১১ নভেম্বর অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি পাপুল, তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে আসামি করে মামলা করে দুদক।
সেই সঙ্গে কুয়েতে পাপুলের কত সম্পদ রয়েছে, তার তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কুয়েতে চিঠি পাঠায় দুদক। এতে দেশে পাপুলের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্তের বিষয়ে উল্লেখ করে কুয়েতে থাকা পাপুলের কোম্পানি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংক হিসাবের তথ্য ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার শহিদ ইসলাম পাপুলের সাজার রায়ের কপি হাতে পায় বাংলাদেশ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, রায়ের কপি ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন সংসদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।