জান্তা সরকারের জারি করা কারফিউ, সড়ক অবরোধ ও নৈশকালীন ধরপাকড়ের মধ্যেই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ফের রাস্তায় নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ ও ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচিসহ সকল বন্দীদের মুক্তির দাবিতে টানা তৃতীয় সপ্তাহ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন সেনাশাসন বিরোধী আন্দোলনকারীরা। সামরিক জান্তার সহিংসতার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দেশটিতে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছেন বিক্ষোভকারীরা।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও প্রতিদিনের টানা বিক্ষোভ ও আনুগত্য অস্বীকারের আন্দোলন দমাতে পারেনি সামরিক জান্তা সরকার। বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আজকের বিক্ষোভকে দেশটির স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম গত এক ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সোমবার মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গনের রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভ কারী প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আটক সকল নেতাদের মুক্তি দিন বলে তারা স্লোগান দিচ্ছেন। এছাড়া বিক্ষোভকারীরা কাউকে কর্মস্থলে না যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ইয়াঙ্গন ছাড়াও মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বিশাল সমাবেশ দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে দেশটির মিতকিয়ানা, পানম, পিনমানাম, দাওয়েই এবং ভামোতে বিক্ষোভে নেমেছে বিক্ষোভকারীরা।
হেট হেট লাইং (২২) নামে এক বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমরা জান্তা সরকার চাই না, আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা নিজেরাই আমাদের ভবিষ্যৎ গড়তে চাই। এই বিক্ষোভকারী আরও বলেছেন, আমার মা আমাকে বিক্ষোভে আসতে নিষেধ করেনি তবে তিনি শুধু বলেছেন নিজের খেয়াল রেখো।
সকাল থেকে রাজধানী নাইপিদোসহ সব শহরের দোকানপাট রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে।
রোববার রাজধানী নেপিদোতে আন্দোলনকারী এক নারীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। ২০ বছর বয়সী মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইন একটি সুপারমার্কেটের কর্মী ছিলেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভকারীদের একটি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালালে খাইন গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গত শুক্রবার তিনি মারা যান।
খাইন এখন বিক্ষোভকারীদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে তার ছবি এখন প্রায়ই ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এএপিপি জানিয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর ৬৫০ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে ৫৯৪ জনকে এখন পর্যন্ত বন্দি করে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ গত রাতে মিন্ত ও নামের এক সংসদ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির নেত্রী অং সান সু চি ও অন্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে সামরিক বাহিনী।