চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ৩ লাখের বেশি ভোটে নির্বাচিত মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী শপথ নিতে যাচ্ছেন আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি। শপথের পর বাণিজ্যিক রাজধানীর মেয়রকে এবার মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের সাথে চট্টগ্রামের মেয়রকেও পদমর্যাদা দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা দুই সিটির সাবেক মেয়রকে আগে যেহেতু পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তাই নতুন পরিষদের মেয়রও পদমর্যাদা পাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে চট্টগ্রাম সিটির আগের দুই মেয়রকে যেহেতু পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি তাই এবার দেওয়া হবে কিনা সেটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর উপরই নির্ভর করছে। হয়তো তিন সিটির মেয়রকে এবার একসাথে পদমর্যাদা দেওয়া হতে পারে।
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস জয়ী হন। নির্বাচনের ২৬ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি তারা শপথ নেন। তারা প্রায় ১ বছর আগে শপথ নিলেও এখনও তাদের পদমর্যাদা দেয়নি সরকার। গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। আগামী চার দিন পর তার শপথ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ঢাকার দুই সিটির আগের মেয়রকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় সামনে হয়তো নতুন দুই মেয়রও পদমর্যাদা পেতে পারেন। তবে চট্টগ্রাম সিটির নতুন মেয়র পদমর্যাদা পাবেন কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সেটা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর উপরই নির্ভর করছে।
দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মধ্যে ২০১৬ সালের ২১ জুন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এবং ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রয়াত আনিসুল হককে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয় সরকার। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলামকেও মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়। একই সময়ে রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে প্রতিমন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয় সরকার।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমাকে তো আগের মেয়াদে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। আশা করছি, সামনে আবার দেওয়া হবে। তবে আমি মন্ত্রীর মর্যাদা পাবো কি পাবো না তা নিয়ে চিন্তা করি না। আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
দেশের পাঁচ সিটি মেয়রের সাথে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে পদমর্যাদা দেয়নি সরকার। একইভাবে সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুর, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ সিটির মেয়রকেও কোনো পদমর্যাদা দেওয়া হয়নি।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র বিএনপি সমর্থিত মোহাম্মদ মনজুর আলমও পদমর্যাদা পাননি। তবে ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এর আগে ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের প্রথম মনোনীত মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম সিটির নবনির্বাচিত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমার প্রত্যাশার কিছু নেই। তবে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র। পদমর্যাদা পাবো কিনা সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’
চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকাসহ রাজশাহী, খুলনা এমনকি নারায়নগঞ্জের মেয়র পদমর্যাদা পেলে দেশের দ্বিতীয় রাজধানী চট্টগ্রামের মেয়র কেন পাবেন না? গত দুই মেয়াদে চট্টগ্রাম সিটির দুই মেয়রকে সরকার পদমর্যাদা দেয়নি। আর চট্টগ্রামের মেয়রকে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া উচিত। ঢাকাকে দুই ভাগ করার পরও সেখানকারকার মেয়ররা যদি পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পান চট্টগ্রামের মেয়র কেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবে? আশা করি, চট্টগ্রামের নতুন মেয়রকে সরকার এবার পূর্নমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেবেন।’
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, সিটি করপোরেশন আইনে মেয়রদের পদমর্যাদার বিষয়ে কিছু বলা নেই। রাষ্ট্রপতির আদেশে মেয়রদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেন। প্রধানমন্ত্রী যে মেয়রকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেন, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দেন।
দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, মন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ৯২ হাজার টাকা এবং উপমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানী পান। এই সম্মানী করমুক্ত। এর বাইরে তারা সরকারি বাসভবন পান। সরকারি বাসভবন পাওয়া না গেলে তারা ভাড়া বাড়িতে থাকতে পারবেন এবং ওই বাড়ির যাবতীয় বিল সরকার পরিশোধ করবে।