রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৫ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা চসিক নির্বাচন স্পেশাল

ফুরফুরে মেজাজে বিদ্রোহীরা, দুশ্চিন্তায় মনোনীতরা

চসিক নির্বাচন: কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ভোটের মাঠ উন্মুক্ত!


রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ৫:৩০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১২টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ এসব ওয়ার্ডে ভোটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহীদের মধ্যে। বিদ্রোহীরা ভোটের মাঠে আছেন ফুরফুরে মেজাজে আর মনোনীত প্রার্থীরা আছেন দুশ্চিন্তায়। চাপমুক্ত থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটের মাঠ উন্মুক্ত বলে মনে করছেন।

শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে বিদ্রোহীদের টিকে থাকা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

দলীয় মহল থেকে জানা গেছে, মেয়র প্রার্থীর ভোটে প্রভাব পড়তে পারে-এমন শঙ্কায় আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোটের মাঠ থেকে সরাতে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ একটা বার্তা দিয়েছেন। মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মতো মেয়র প্রার্থীর ভোটের হার যাতে সমান থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে তাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের লড়াই করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জহুরুল আলম জসীম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ধারণা করেছিলাম, আমাদের ওপর ভোটের আগে চাপ প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু কোনো চাপের মধ্যে পড়িনি। আওয়ামী লীগ মুখে না বললেও এখন দেখছি, ভোটের মাঠ ওপেন করে দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল থেকে বলা হয়েছে, আমরা (মনোনীত ও বিদ্রোহী) যাই করি না কেন, মেয়র প্রার্থীর ভোটের হার যেন আমাদের সমান থাকে। ভোটের দিন আমরা সেদিকে খেয়াল রাখবো।

১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল ফজল কবির আহমদ মানিক রাজনীতি সংবাদকে বলেন, এখনো কোনো বাধা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়নি। আশা করছি, ভোটের দিনও সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে হবে।

ভোটের মাঠ উন্মুক্ত হয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, এখনো কোনো চাপের সম্মুখীন হয়নি। আর হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। দলের মাথাব্যাথা মেয়র প্রার্থীর ভোট নিয়ে। মেয়র প্রার্থীর ভোট ঠিক থাকলেই হলো।

এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সালাহ উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, বিদ্রোহীরা যেহেতু ভোটে আছে মাঠ তো ওপনেই মনে হচ্ছে।

১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা তো দেখলাম।

নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, কেন এতো নাটক করা হলো বুঝলাম না। বিদ্রোহীরা যদি ভোটের মাঠে থাকার সুযোগ পায়, তাহলে কাগজে-কলমে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল ?

গত ২০ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দুই এক দিনের মধ্যেই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক মন্ডলীর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে বলে কৌশলে সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে। কেন্দ্র কৌশলগত কারণে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ভোটের আগে পদক্ষেপ নেয়নি। যে কারণে বিদ্রোহীরা ভোটের মাঠে চাপমুক্ত আছেন।

চসিক নির্বাচনে নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১২টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৪৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিপরীতে ৭৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। নগরীর ৩৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টিতে রয়েছে একক প্রার্থী। ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ৬১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। আর ১২টি সংরিক্ষত মহিলা ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ১৭ জন। দুটিতে রয়েছে একক প্রার্থী। বাকি অর্থাৎ ৩১টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত ৪৩ জন প্রার্থীর বিপরীতে মোট ৭৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।

উল্লেখ্য, সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে কাউন্সিলর পদে ভোট হচ্ছে ৩৯টিতে। ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী পদে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে গত ২১ জানুয়ারি এই ওয়ার্ডে শুধুমাত্র কাউন্সিলর পদে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে ভোটের আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন উর রশিদ।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর