বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আঞ্চলিক রাজনীতি

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় নেতার ‘কূটচাল’, অসন্তোষ



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ৭:৫৬ : অপরাহ্ণ

সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এক নেতার একক নেতৃত্বে এই কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতাকে বাদ দিয়ে অধিকাংশ নিস্ক্রিয় নেতাকে স্থান দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। শুধু বাদ পড়া নেতারা নয়, কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতারাও এই কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।

জেলা বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতারা বলছেন, এই কমিটি গঠনের নেপথ্যে কেন্দ্রীয় দুই নেতার ‘কূটচাল’ রয়েছে। তারা গ্রুপিং রাজনীতির সুযোগ নিয়ে তাদের অপছন্দের নেতাদের বাদ দিয়ে পছন্দের নেতাদের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন।

২৩ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার ৪৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারকে; যিনি এর আগে ২৭ বছর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন। কেন্দ্র থেকে একই সময়ে ঘোষিত চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য সচিব থাকলেও উত্তর জেলার কমিটিতে কাউকে সদস্য সচিব করা হয়নি।

দলীয়ভাবে জানা গেছে, কমিটিতে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনসহ কয়েকজন ত্যাগী নেতা স্থান না পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ নেতারা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক একটি মামলায় কারাগারে থাকাকালে ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনকে আদালতে নিয়ে আসার সময় ডান্ডাবেড়ি পড়ানো হয়েছিল। কমিটিতে এমন ত্যাগী নেতার স্থান না হওয়ার বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারছেন না।

আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সরোয়ার আলমগীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনের মতো ত্যাগী নেতা কমিটিতে স্থান না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তবে আমরা এই কমিটি নিয়ে আশাবাদী, সামনে গোলাম আকবরের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হবে।’

জেলা বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতারা বলছেন, ৪৩ সদস্যের এই কমিটিতে ২৩ জনই নিস্ক্রিয় নেতা; যাদের গত ১০ বছরে সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘৪৩ সদস্যের এই কমিটিতে ২৩ জনকে গত ১০ বছরে দলের কোনো সভা-সমাবেশে দেখিনি।’

জেলা বিএনপির কয়েকজন বিক্ষুব্ধ নেতা তাদের পরিচয় প্রকাশ না করে জানান, উত্তর জেলার কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকা দুই কেন্দ্রীয় নেতার একজন হলেন নোয়াখালীর বাসিন্দা, অপরজন হলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা। তারা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর অনুসারীদের কোণঠাসা করতে অত্যন্ত সুকৌশলে দলের প্রধানকে ভুল বার্তা দিয়ে তাদের পছন্দমতো এই কমিটি সাজিয়েছেন। কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত এক কেন্দ্রীয় নেতা আগামীতে উত্তর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসার পরিকল্পনা করে এই আহ্বায়ক কমিটি সাজিয়েছেন ।

দলীয় সূত্রের খবর, উত্তর জেলা বিএনপির কয়েকজন ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা নিয়ে বিস্মিত কেন্দ্রীয় নেতারাও।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনসহ আরও অনেক ত্যাগী নেতা স্থান পাননি, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়ে সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী আমি অবগত থাকার কথা। কিন্তু দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমাকে কিছু জানাননি। হয়তো তিনি আমার করোনাক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন।’

বিএনপি মহাসচিব উত্তর জেলার কমিটিতে স্বাক্ষর করলেও এতে তার কোনো ভূমিকা ছিল না বলে জানিয়েছেন নেতারা।

হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‌‘আমিসহ আরও যেসব নেতাকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি, আমরা বিএনপি মহাসচিবের সাথে ফোনে এ বিষয়ে কথা বলি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, উত্তর জেলার কমিটি নিয়ে তার কোনো এখতিয়ার ছিল না। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি কেবল কমিটির তালিকায় স্বাক্ষর করেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‌‌আমিসহ আরও যেসব নেতার কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি এর পেছনে কারো চক্রান্ত থাকতে পারে, নেপথ্যে কেউ কলকাঠি নেড়েছেন।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর