দেশ ও জাতির প্রতি সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সৈনিকের মূল পরিচিতি হচ্ছে শৃঙ্খলা। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সেই প্রকৃত সৈনিক। তিনি বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশ অর্থনৈতিকভাবে যত উন্নত হবে, আপনারদের পরিবারগুলোও উন্নত হবে।
আজ শনিবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীরউত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে তিনি এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিককদের শপথগ্রহণ ও কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এই বাহিনীর তৃতীয় রিক্রুট ব্যাচ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আজ আপনাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি। অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হলো চোরাচালানি বন্ধ করা। তোমাদের কাছে আমার হুকুম স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তোমরা পারবা। এ বিশ্বাস তোমাদের ওপর আমার আছে। মনে রাখতে হবে স্মাগলারের কোনো জাত নাই, ধর্ম নাই। তারা মানুষ নামের নরপশু। তারা এদেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে।’
জাতির পিতার দেয়া নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, এই নির্দেশনাটাও আপনারা মেনে চলবেন। আমাদের যেমন সার্বভৌমত্ব রক্ষা,স্বাধীনতা রক্ষা পাশপাশি এই ধরনের অপকর্মগুলো রোধ করে আপনরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। কারণ এই কথাগুলো এখনও প্রাসঙ্গিক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি আর আমার ছোটো বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পরিবারের সব সদস্যকেই হত্যা করা হয়েছিল। একইসঙ্গে আমার মেজ ফুপুর বাড়ি, সেজ ফুপুর বাড়ি, ছোট ফুপুর বাড়ি—প্রত্যেকটি বাড়িতে আক্রমণ করা হয় এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। এরপর জাতীয় চার নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়। এরপরই বাংলাদশ আদর্শচ্যুত হয়।’
তিনি বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক করে গড়ে তোলা, শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কাজ আমরা শুরু করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমাদের স্থল সীমানা চুক্তি জাতির পিতা করে গিয়েছিলেন। কিন্তু ৭৫-এর পর যে সরকারগুলো ক্ষমতায় এসেছিল, জিয়াউর রহমান, এরশাদ বা খালেদা জিয়া কেউ কিন্তু আমাদের বর্ডার গার্ডের সঙ্গে ভারতের সমস্যাটা মেটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমি সরকারে আসার পর এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং সেটা আমরা সমাধান করি। তাছাড়া আমাদের বর্ডার গার্ডের যেসব এলাকা উন্মুক্ত ছিল, প্রত্যেকটাতে আমরা বর্ডার পোস্ট নির্মাণ করে দিচ্ছি। বিজিবিকেও শক্তিশালী করা এবং প্রতিটি জায়গায় তাদের যে অবস্থানটা, সেটা যেন নিশ্চিত হয়, তাঁর ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, বিজিবিএম (বার), এনডিসি, পিএসসি স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৭৯১ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫৯০ জন পুরুষ ও ২০১ জন নারী। বিজিটিসিঅ্যান্ডসি ছাড়াও আরও ছয়টি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের এক হাজার ৭৩৩ জন রিক্রুটসহ সর্বমোট দুই হাজার ৫২৪ জন রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।