রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:১২ : অপরাহ্ণ
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে চলমান অস্থিরতা ও সংকট নিরসনে আজ (৫ ডিসেম্বর) শনিবার দেশের শীর্ষ কওমি আলেমরা যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসায় চার ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করেন। বৈঠকে ৫ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন তারা। কিন্তু ৫ দফা প্রস্তাবে ভাস্কর্য নির্মাণ প্রশ্নে অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন তারা। তারা নিজেরা কোনো বিকল্প প্রস্তাব না দিয়ে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিকল্প খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান।
বৈঠকে দেশের প্রতিনিধিত্বশীল শীর্ষ আলেমরা বিভিন্ন প্রস্তাবনা পেশ করেন। পরে সবার সম্মতিতে ৫ দফা প্রস্তাবনা পাস হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়-
১. মানব মূর্তি ও ভাস্কর্য যেকোনো উদ্দেশে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো নেতাকে ভাস্কর্য বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃতের আত্মার কষ্ট হয়।
কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণ না করে শতকরা ৯০ ভাগ জনগণের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করা যুক্তিযুক্ত।
২. আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, কার্টুন, বিষোদগার ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের লক্ষ্যে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।
৩. বিগত সময়ে ঈমানি আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশে আলেম-উলামা ও ইমাম-খতিবসহ সাধারণ মুসলমানদের ওপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক।
ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্থ পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উম্মুক্ত করে দেয়া হোক।
৪. সম্প্রতি শব্দ দূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দ্বীনি মাহফিলে লাউডস্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অপরদিকে সাধারণ শব্দদূষণ তথা উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ মাহফিল নিয়ে শব্দ দূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত।
অতএব জনগণের কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনি মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।
৫. যে সব বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ, সেসব বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ একশ্রেণির মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে।
কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানি দিচ্ছে। এসবের খোঁজ-খবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব।
উস্কানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর মন্তব্য ও গান, মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। উলামায়ে কেরাম এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্ভূত বিশৃংখলা ও অস্থিরতা সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না।
বিশেষ করে ইসলাম ও বাংলাদেশ বিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
বৈঠকে শীর্ষ আলেমদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হাটহাজারী মাদরাসার প্রতিনিধি মুফতি জসীমুদ্দীন, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মুফতি রুহুল আমীন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদি, আল্লামা আব্দুল হামিদ, আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা নাজমুল হাসান, আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতি মনসুরুল হক প্রমুখ।