রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১১:১৭ : পূর্বাহ্ণ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা স্টেশনের পাশে রেলের মালিকানাধীন পুকুরে অবৈধভাবে পাম্প হাউস বসিয়েছে কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (কেএসআরএম) কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে নিরাপত্তার দায়িত্বে তিনজন এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রাখা হয়েছে একজনকে। রেললাইনের পাশ দিয়ে প্রায় আধাকিলোমিটার পাম্প হাউসের পাইপলাইন টানা হয়েছে।
অনুমতি না নিয়ে রেলের ভূমি ব্যবহার, স্থাপনা নির্মাণ এবং পাইপলাইন বসানোর কারণে সরকারি সম্পদ নষ্ট এবং ট্রেন চলাচল চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। অথচ এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, রেলের কিছু কর্মচারী এবং কর্মকর্তার যোগসাজশে কেএসআরএম অবৈধভাবে পাম্প হাউস বসিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে আরেকটি পাম্প হাউসে পানি নিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য চক্রটি মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়েছেন। স্টেশনকেন্দ্রিক নানা অপকর্মে জড়িত থাকলেও একই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করা মাস্টার সাইফুদ্দিন বশর বলছেন, রেললাইনের ২০ ফুটের মধ্যেই তার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ। এর পর জাহান্নামে
গেলেও তার জানার দরকার নেই। কিন্তু রেলের জিএস রুলস বলছে, স্টেশন এলাকার যে কোনো পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর দায়িত্ব স্টেশন মাস্টারের। রেলের অ্যাকোয়ার করা জায়গায় যে কোনো ধরনের ঘটনা জানাতে হবে।
রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধভাবে ভূমি ব্যবহার এবং রেললাইনের পাশ দিয়ে যে কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি ও পাইপলাইন বসানোর সুযোগ নেই। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রেল ভূমি ব্যবহার করতে চাইলে ভূ-সম্পত্তি, প্রকৌশল, যান্ত্রিক এবং রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের অনুমতি নিয়ে রেলের মহাপরিচালকের কার্যালয় ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। তার আগে বাংলাদেশ রেলের জেনারেল ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ের (জিআইবিআর) পরিদর্শন, নকশা অনুমোদন, ব্যবহার বিধি এবং প্রয়োজনীয় ফি নির্ধারণ এবং অনাপত্তিপত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়াই পাম্প হাউস ও পাইপলাইন বসিয়েছে। ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য-১) রফিকুল ইসলাম, ওয়েম্যান মোহাম্মদ আজিজ ওরফে মামলা আজিজ ও স্টেশন মাস্টারকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে রেলের জায়গা ব্যবহার করছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল ও ভূমি বিভাগের নজরে আনলে তারা অবগত নন জানিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এরই অংশ হিসেবে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অন্যদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আরিফ বিভাগীয় প্রকৌশলীকে-১ তদন্তের জন্য মৌখিক নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে অনুমতি ছাড়া রেলের পুকুরে পাম্প হাউস বসানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে বিএস রেকর্ডে পুকুর হিসেবে চিহ্নিত না থাকায় লিজ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রেলের জায়গা দিয়ে পাইপলাইন নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে প্রকৌশল বিভাগকে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার শাহাদাত আলী বলেন, রেলের জায়গায় পাম্প হাউস এবং পাইপলাইন বসানোর আগে ভূমি ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে অনুমোদন দিতে হবে। এজন্য আলাদা নকশা করে জিআইবিআর পরিদর্শন হবে। রেল চলাচলের নিরাপত্তা এবং ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অনুমোদন দিতে পারে। এর পর জিএম এবং রেলের মহাপরিচালকের অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কেএসআরএম অনুমোদন নেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বলেন, বিষয়টি এখন আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত জমা দেওয়া হয়েছে। তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মোহাম্মদ আবদুল হানিফ বলেন, ‘তাকে সম্প্রতি বদলি করা হয়েছে।’
রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা এবং স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মূলত ওয়েম্যান আজিজের মাধ্যমে রেলের পুকুরটি ব্যবহার করছে কেএসআরএম। অনুমোদনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়াতে রফিকুল ইসলাম ও আজিজের মাধ্যমে অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। সেখানে আজিজসহ কয়েকজন মাছ চাষ করেছে। ফলে স্থানীয়দের ধারণা রেলের লোকজনই পুকুরটি ব্যবহার করছে। ওয়েম্যান আজিজ পুকুরে মাছ চাষের বিষয়টি স্বীকার করলেও কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে কেএসআরএমের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন আজিজের মাধ্যমে পুকুরটি সংস্কার করে তারাও ব্যবহার করছেন।
কেএসআরএমের ব্যবস্থাপক (ভূমি) মোহাম্মদ কামালের কাছে অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এতে আপনার কোনো অসুবিধা আছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রেলের অনেকেই আমাকে ফোন করেছে। আপনি শুধু কেএসআরএমের পেছনে লেগে আছেন। এসব আপনি ভালো করছেন না। অনুমতির বিষয়টি স্পষ্ট করার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, নিয়েছি। কীভাবে নিয়েছেন? বললাম তো যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়েছি। উত্তেজনা নিয়ে প্রায় ৭ মিনিট ৭ সেকেন্ড কথা বলার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ৫ মিনিট পর পুনরায় প্রতিবেদকের মোবাইলে ফোন করে কামাল উত্তেজিত হয়ে পড়ার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলেন, আসলে আমরা আজিজের মাধ্যমে পুকুরটি নিয়েছি। শীতকালে সেটি শুকিয়ে যেত। স্টেশন এলাকার লোকজন ব্যবহার করতে পারত না। আমাদের অনুরোধ করাতে সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে দিয়েছি। মানুষের উপকার করা কী অপরাধ? পাম্প হাউস বসিয়ে আমরাও পানি নিচ্ছি। এখন আপনি লিখলে সেখান থেকে পানি আনব না। ওয়াসার লাইনের পানি নেব।
সূত্র: আমাদের সময়