বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজনীতির মুখ

নন্দিত রনি, নিন্দিত রনি!


নুরুল আজিম রনি

রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম প্রকাশের সময় :১১ নভেম্বর, ২০২০ ৫:৪৮ : অপরাহ্ণ

নুরুল আজিম রনি। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকাকালে আলোচনা-সমালোচনা, নিন্দা, নন্দন, ফুল ও চন্দন সবই জুটেছে তরুণ এই নেতার নামের পাশে। প্রগতিশীল সাবেক এই ছাত্রনেতা এখন দলীয় কোনো পদে না থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে চট্টগ্রামের রাজনীতি পাড়ায় আলোচিত-সমালোচিত। যেনো একই সাথে নিন্দিত ও নন্দিত চরিত্র তিনি।

নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর গত আড়াই বছর ধরে রনি চট্টগ্রামে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় নেই। তবে বিভিন্ন জনস্বার্থ ইস্যুতে ফেসবুকে-রাজপথে তিনি সরব হয়ে উঠেন।

সাত বছর আগে নগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার পর রনি নগরীর কাজেম আলী স্কুলের বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আলোচনায় আসেন। এরপর নগরীর স্কুল-কলেজে কোচিং বাণিজ্য, অতিরিক্ত ভর্তি ফি ও অতিরিক্ত ফরম পূরণ ফি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জনসমর্থন লাভ করেন।

নন্দিত রনি, নিন্দিত রনি!
নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন নুরুল আজিম রনি।

পরবর্তীতে খেলার মাঠ নিয়ে আন্দোলন করেও প্রশংসা লাভ করেন। তবে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে রনি সবার নজর কেড়েছিলেন ২০১৫ সালে; চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কব্জা থেকে উদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে।

এই ছাত্রনেতা গত ৭ বছরে রাজনৈতিক ও নানা জনস্বার্থ বিষয়ক ইস্যুতে আন্দোলন করে যেমন নন্দিত হয়েছেন, তেমনি কিছু নেতিবাচক ঘটনায় তিনি নিন্দিতও হয়েছেন। ২০১৬ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে একটি কেন্দ্রের অদূরে আটক হয়েছিলেন রনি। তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

২০১৮ সালের ৩১ মার্চ চকবাজারে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায়ের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন রনি। বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ বিতর্কের সুত্রপাত হয়। এ ঘটনায় জাহেদ খান নগরীর চকবাজার থানায় রনির বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। বিতর্ক পিছু লেগেই ছিল রনির।

এরপর ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল নগরীর জিইসি মোড়ের একটি কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে তার কার্যালয়ে রনির মারধরের ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গণে রনি সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই দিনই তিনি নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভক্তপ্রাণ ছাত্রনেতা রনি দলীয় পদ ছাড়লেও রাজপথ ছাড়েননি। তিন মাস পর নগরীতে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে অতীত বিতর্ক ছাপিয়ে তিনি ফের আলোচনায় আসেন।

গত দুই বছর ধরে দলীয় পদে না থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা-সমালোচনায় সরব আছেন রনি।

নগরীর হালিশহরে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় গড়ে উঠা আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি অনেকের প্রশংসা লাভ করেন। কিন্তু আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনাও যেন পিছু ছাড়ে না তার।

গত ৩ অক্টোবর নিজের ফেসবুক আইডিতে রনি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।

তিনি লিখেছিলেন, ‘বাফুফে নির্বাচনের শেষমুহূর্তে গোল করে বসলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত ৪ বছর ধরে কাজী সালাউদ্দিন এর ধারাবাহিক এই সমালোচক আজ সোনারগাঁও হোটেলে প্রবেশ করেছেন। গোল্লায় যাক ফুটবল, ধান্দা ঠিক থাক।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ফেসবুকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে সমালোচনা করে আসছেন রনি।

বিভিন্ন ঘটনায় নিন্দিত হলেও ফেসবুকে রনির ফলোয়ার সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েই চলেছে। ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ফেসবুকে রনির ফলোয়ার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজারের ওপরে।

নিন্দিত ও নন্দিত দুই চরিত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে নুরুল আজিম রনি রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমি নিজেকে নিজে মূল্যায়ন করবো না। মানুষই আমাকে মূল্যায়ন করবে আমি নিন্দিত নাকি নন্দিত।’

অতীতে বিতর্কের জন্ম দেওয়া ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জিইসি মোড়ের  কোচিং সেন্টারের মালিককে মারধরের ঘটনায় আমি অনুতপ্ত। আমি সেই কোচিং সেন্টারের অংশীদার ছিলাম। মূলত অংশীদারিত্বের বিষয় নিয়ে  সেদিন রাগের মাথায় আমি কোচিং সেন্টারের মালিককে মারধর করেছিলাম। এটা আমি ভুল করেছি। কিন্তু হাটহাজারীতে ইউপি নির্বাচনের সময় আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে আটক করা আর চকবাজারে বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের কাছে চাঁদা দাবির বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। আমার নৈতিক অবস্থান নিয়ে আঘাত করা হয়েছে।’

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে সমালোচনা করার কারণ জানতে চাইলে নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘আমি নগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার পর আ জ ম নাছিরের সঙ্গে রাজনীতির মঞ্চে একসাথে ছিলাম। কিন্তু ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্নে আমি তার কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে আসছি। আমি তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করি না।’

নানা বিতর্ক ও সমালোচনার পরও ফেসবুকে ফলোয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জনস্বার্থ বিষয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আন্দোলনের নামে আপোষ করিনি। তাই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এখনো পাচ্ছি।’

সাংগঠনিকভাবে দলের সাথে আবার সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্য আছে কিনা জানতে চাইলে নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘দল আমাকে প্রয়োজন মনে করলে সম্পৃক্ত হবো। কিন্তু আমি নিজ থেকে তদবির করে সম্পৃক্ত হবো না। নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যও আমি কারো কাছে তদবির করিনি।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর